বাংলাদেশের কাছে পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। বাংলাদেশের অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের ক্ষমতা না থাকায় এ প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, রোসনেফ্ট অয়েল কোম্পানি রাশিয়া গত সপ্তাহে এ প্রস্তাব দিয়েছে।
কোম্পানিটি কী দামে তেল সরবরাহ করবে তা এখনো জানা যায়নি। তবে, ন্যায্য মূল্যের আশা করছে বাংলাদেশ।
চীন এবং ভারত এখন নিয়মিত দামের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কম দামে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল সংগ্রহ করছে।
বর্তমানে বিপিসি আটটি দেশ থেকে পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে। দেশগুলো হলো- কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর এবং ভারত।
পরিশোধিত তেলের দাম এসঅ্যান্ডপি প্ল্যাটস এর রেটে নির্ধারিত হচ্ছে। ক্রুড অয়েলের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ে যত ডলার থাকে, তার সাথে আরো ২০-২৪ ডলার যোগ করে নির্ধারণ করা হয় পরিশোধিত তেলের দাম।
যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “আমরা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ছাড়াও আরো কিছু দেশের কাছ থেকে প্রস্তাব পাচ্ছি। তাদের এসব প্রস্তাবের শর্তাবলী কিভাবে পূরণ করা যায় তা দেখবো আমরা।”
“এর আগে আমরা রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম কারণ আমাদের তা পরিশোধন করার ক্ষমতা নেই,” যোগ করেন তিনি।
রাশিয়ান কোম্পানির কাছ থেকে পরিশোধিত তেল সংগ্রহের সর্বশেষ প্রস্তাব পাওয়ার পর বিপিসি গত সপ্তাহে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক করেছে বলে জানিয়েছে বৈঠকের একাধিক অংশগ্রহণকারী।
রাশিয়া কিছু শর্ত দেওয়ায় বিপিসি এখন প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে।
মহাব্যবস্থাপক (কমার্শিয়াল অ্যান্ড অপারেশনস) মোস্তফা কুদরত এলাহীর নেতৃত্বে প্রস্তাবটি বিশ্লেষণের জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে মোস্তফা কুদরতের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল পরিশোধনে যত বাধা
ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. লোকমান বলেন, “আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে ডকুমেন্ট পেয়েছি। সেগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে আমাদের শোধনাগারে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করা সম্ভব নয় কারণ এর ঘনত্ব মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত তেলের তুলনায় বেশি।”
তিনি আরো জানান, ইআরএল রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করতে প্রযুক্তিগতভাবে অক্ষম।
“তাছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের প্ল্যান্টটি ৫৪ বছর পুরানো। রাশিয়ান তেল পরিশোধন করার জন্য এটি সাময়িকভাবে সংশোধন করা যাবে না। আমরা যদি রাশিয়ান অপরিশোধিত তেলের জন্য এটিকে সংশোধন করি তবে পুরো প্ল্যান্টটি শৃঙ্খলার বাইরে চলে যেতে পারে,” তিনি যোগ করেন।
সংকট মোকাবেলায় অবিলম্বে একটি নতুন শোধনাগার নির্মাণ করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নতুন শোধনাগার তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।”
লোকমান বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির জন্য উপযুক্ত কিনা তা আবার পরীক্ষা করতে তারা রাশিয়া থেকে তেলের নমুনা পেতে পারেন।
বিকল্প হিসেবে প্রস্তাবিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড-২-এ বাংলাদেশকে রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের পরামর্শ দেন তিনি।
স্থানীয় চাহিদা মেটাতে বার্ষিক ৪৫ লাখ টন পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ২০১০ সালে ইআরএল-এর ২য় ইউনিট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
তবে এর প্রস্তাবটি অন্তত ১০ বার সংশোধন করা হলেও এখনও নির্মাণকাজ শুরু হয়নি।
১৯৬৮ সালে নির্মিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বার্ষিক সক্ষমতা প্রায় ১৫ লাখ টন। ইতোমধ্যে এই রিফাইনারিতে সৌদি আরামকো এবং ইউনাইটেড আরা থেকে আসা সাপ্লাই বুক এর করা হয়েছে।
দেশের শোধনাগারগুলো আপগ্রেডের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করতে আসছে রাশিয়ান দল
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় শোধনাগারগুলোকে আপগ্রেড করার সম্ভাবনা যাচাই করতে শীঘ্রই ঢাকা সফর করবে রাশিয়ান বিশেষজ্ঞদের একটি দল।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরে রাশিয়ান জ্বালানির বাজার এখন কিছুটা লোকসানের মধ্যে রয়েছে। রাশিয়া থেকে সস্তা দামে তেল আমদানি করছে ভারত।
মোমেন বলেন, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানিতে বাংলাদেশের কোনো নিষেধাজ্ঞা-সম্পর্কিত সমস্যা না থাকলেও তা পরিশোধন করার ক্ষমতার অভাব রয়েছে।
তিনি যোগ করেন, “আমরা যদি রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করার সক্ষমতা গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমরা তাদের থেকে ক্রুড অয়েলও কিনতে পারবো।”
তবে, এতে বেশ সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
“বিশেষজ্ঞদের একটি দল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় এসে আমাদের শোধনাগার পরিদর্শন করবে। বিদ্যমান প্রযুক্তিগত বাধা উত্তরণে কাজ করবে তারা।”
“যেহেতু আজ (১৬ আগস্ট) নির্দেশনা এসেছে, আমরা শীঘ্রই প্রয়োজনীয় কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বসব,” যোগ করেন পররাষ্ট্র সচিব।