প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আর কখনো পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ মর্যাদা নিয়ে মথা উঁচু করে থাকবে এবং সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁও কার্যালয়ে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরস্কার প্রদান শেষে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। সেটা শুধু আমাদের না, সারা বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অনেকে মনে করে এটা একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার, আসলে তা না। পরিকল্পিতভাবে যদি কাজ করা যায়, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে যদি প্রতিটি প্রকল্প প্রণয়ন করা যায় এবং বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে যেকোনো অর্জনই সম্ভব হলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা সেভাবেই কাজ করি।
মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি গড় আয়ু বেড়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা এতদূর অর্জন করেছি যে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করতে সক্ষম হয়েছি। এটা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই আমরা চাই।
ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, এরপর ভবিষ্যতে যারাই আসবে ক্ষমতায়, তারা এই দিকটি লক্ষ্য রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যার ফলে বাংলাদেশের মানুষ আর কখনও পরমুখাপেক্ষী থাকবে না। বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে চলবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। সেটাই আমরা চাই এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
দেশের সব গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন খুব অল্প লোকই বাকি আছে। ইনশাল্লাহ এমন দিন বাংলাদেশে আসবে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না, সেটা আমরা করতে সক্ষম হব।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অনেক জায়গায় অনেক মানুষ পড়ে আছেন যারা মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন নিজেদের উদ্যোগে। সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদেরও পুরস্কৃত করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা মানুষের কল্যাণে অবদান রেখে যাচ্ছেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন। হয়ত তারা কখনও প্রচারে আসেন না। তারা দৃষ্টি-সীমার বাইরে থাকেন। খুঁজে বের করে তাদের পুরস্কৃত করা উচিত।
স্বাধীনতা পুরস্কার গুণীজনদের হাতে তুলে দিতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় তো এক রকম বন্দিখানায় ছিলাম। বহুদিন পরে মুক্তি পেলাম। আজ আমার ইচ্ছে ছিল এখানে এসে নিজের হাতে….. স্বাধীনতা পুরস্কার এটা তো একবার দিতে পারিনি। কিন্তু বার বার তো এভাবে নিজেকে বঞ্চিত করতে পারি না।
তিনি বলেন, আমি মনে করি যে এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের, অন্তত পুরস্কারটা হাতে তুলে দিতে পারছি। তাই বহুদিন পরে এই অফিসে আসার সুযোগ পেলাম। আর এতদিন তো সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনেই কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করছিলাম।
এ সময় স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্তদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে নেমে এসে জীবিত দুই মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুদ্দীন আহমেদ ও আব্দুল জলিলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পুরস্কার পদক বিজয়ীদের সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে শোনানো হয়। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
এ বছর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আব্দুল জলিল, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস ও মরহুম সিরাজুল হক।
চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল ইসলাম এবং স্থাপত্যে প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন পুরস্কার পেয়েছেন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিদ্যুৎ বিভাগ।