মো. রাশিদুল ইসলাম, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর বাউফলে আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে রাতুল (১৪) নামের এক কিশোর ও সুফিয়া বেগম(৮৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছে। রাতুলের বাড়ি উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের রায় তাঁতের কাঠি গ্রামে। বাবার নাম জহির সিকদার। তাকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে বজ্রপাতে তিনি মারা গেছেন। আর সুফিয়া বেগমের বাড়ি উপজেলার দাশপাড়া ইউনিয়েনর চরআলগী গ্রামে। তার স্বামীর নাম মৃত আহম্মেদ প্যাদা। ঘরের উপর গাছ চাপা পরে তিনি নিহত হন। এ ছাড়াও ঝড়ে উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টা থকে ১১টা ৫মিনিট পর্যন্ত ৩৫ মিনিট স্থায়ী এ ঝড়ে কাঁচা বাড়ি-ঘর, গাছ গাছালি উপরে গেছে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যায় পুরো বাউফল। এসময়ে ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে বাজারে আসা লোকজন ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। রাস্তায় রাতের মতো লাইট জ্বালিয়ে বিভিন্ন গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। বাউফলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক আধাপাকা বাড়ি বিধস্ত ও কয়েক হাজার গাছগাছালি উপড়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এসময় ব্যপক শীলা বৃষ্টি ও বিরামহীন ভাবে বজ্রপাত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু গবাদি পশু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ইব্রাহিম ফরাজি এবং ইসমাইল রাঢ়ী নামে ২জেলে নিখোঁজ রয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক আলকাস মোল্লা নিশ্চিত করেছেন। উভয়ের বাড়ি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর ওয়াডেল এলাকায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে ২টি চাম্বল গাছ পড়ে একটি এম্বুলেন্স এবং মসজিদের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তবে কোন হতাহত হয়নি।
বাউফল পৌর শহরের থানার সামনে সালেহিয়া৷ ফাজিল মাদ্রাসার একটি ভবনের টিনের চালা উপরে রাস্তায় পরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পশু হাসপাতাল রোডে গাছ ভেঙে সড়কের উপর পড়ায় সেখানেও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
উপজেলার গোসিংগা গ্রামের আফসেরের গ্রেজ এলাকায় ঘরের উপর গাছ ভেঙ্গে পরে মা সাবিহা(৩০) তার মেয়ে ইভা (১২) ও দুই বছর বয়সী শিশু মারাক্তক আহত হয়েছে। ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেছে। ও বেশ কয়েকটি খাম্বা ভেঙ্গে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শীলা বৃষ্টিতে তরমুজসহ রবি ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বাউফল জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. মজিবুর রহমান চৌধুরী জানান, ৩৩কেবি মেইন লাইনের তার ছিড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ২২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে গেছে। উপজেলার প্রায় সব এলাকাতেই বৈদ্যুতিক তারের উপর গাছ পড়ে আছে। ঈদ পূর্ব মুহূর্তে শ্রমিক সংকট থাকায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। পৌর শহরে রাতের মধ্যে বিদ্যুৎ দেয়ার চেষ্টা করছি তবে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১৭জনকে বাউফল হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন। গুরুতর আহত ২জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১কিশোরকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে ধারণা করছি বজ্রপাতে তার মৃত হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য কৃষি বিভাগ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।