1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

বাফুফের উপর আবারো ২০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

রিপোর্টার
  • আপডেট : সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) দেওয়া সরকারের ২০ কোটি টাকা হাপিসের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সে স্থায়ী আমানত হিসাব করলেও বছর না ঘুরতে সেই স্থায়ী আমানত ভেঙে অর্থ তুলে নিয়েছে বাফুফে।

সারা দেশে ফুটবল উন্নয়নে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাফুফেকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই বরাদ্দের কথা বলা হয়।

ওই চিঠিতে (স্মারক নং-০৭.১২৩.০২০.০৩.৩৬.০১৬.২০২৩.৮১) বলা হয়েছিল, ফুটবল খেলার দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে তহবিল গঠনের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের অনুকূলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ের ক্রীড়া সংস্থার মঞ্জুরির আওতায় অন্যান্য অনুদান খাতে এককালীন সরকারি অনুদান হিসাবে ২০ কোটি টাকা দেওয়া হলো। কেবল ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাফুফে কর্তৃক কোনো সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নয়, বরং এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হলে তা থেকে অর্জিত মুনাফা ফুটবলের নানাবিধ উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে হবে।

 

অথচ অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া ২০ কোটি টাকার পুরোটাই শেষ করে ফেলেছে বাফুফে। এই অর্থের কোনো হদিস নেই বাফুফের অডিট রিপোর্টেও। ২০২০ সালে সরকারের দেওয়া বাজেট বরাদ্দের প্রথম কিস্তির ১০ কোটি টাকা খরচ না করেই যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছিলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ১৫টি খাতে খরচ করা হবে বলে জানিয়েছিলো বাফুফে। প্রথম কিস্তির ৫০ ভাগ অর্থাৎ ১০ কোটি টাকা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় হয়ে বাফুফের তহবিলে জমা হয়। ১০ কোটি টাকার মধ্যে ৬৪ জেলার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ জেলা ফুটবল লিগ আয়োজনের জন্য পাঁচ কোটি ৭৬ লাখ, প্রিমিয়ার লিগের ১৩টি ক্লাবের জন্য ৬৫ লাখ, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের জন্য ৫৫ লাখ, প্রথম বিভাগ ফুটবলে ৩৯ লাখ, দ্বিতীয় বিভাগে ২৬ লাখ এবং তৃতীয় বিভাগের জন্য সাড়ে ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছিল।

এছাড়া বাফুফে ফুটবল একাডেমির জন্য ৩০ লাখ, জাতীয় দলের জন্য ৫৫ লাখ, মহিলা ফুটবল দলের জন্য ১০ লাখ এবং শেরেবাংলা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য এক কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ বিবরণীতে স্বাক্ষর করেছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নিষিদ্ধ সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। বাফুফে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ের যে হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছে তার পুরোটাই শুভংকরের ফাঁকি। জেলা ফুটবল লিগের ব্যয় তিন কোটি ৫৫ লাখ, প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে ৬৮ লাখ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ৪৫ লাখ, প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে ৪২ লাখ, দ্বিতীয় বিভাগে ২৬ লাখ, তৃতীয় বিভাগে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে বিবরণীতে বলা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ৬৪ লাখ, জাতীয় ফুটবল দলের পেছনে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা, একাডেমির জন্য ২০ লাখ এবং মহিলা ফুটবলের পেছনে ৭৬ লাখ টাকা খরচ দেখিয়েছে বাফুফে।

সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হলো, সরকারের রাজস্ব বিভাগে আয়কর বাবদ ৫০ লাখ টাকা জমা দেওয়ার তথ্য হিসাব বিবরণীতে রয়েছে। অথচ ট্যাক্স বাবদ একটি টাকাও জমা দেয়নি বাফুফে। এক পৃষ্ঠার মধ্যে ১০ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচের হিসাব বিবরণীতে স্বাক্ষর করেছেন বাফুফের চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার আবু হোসেন এবং নিষিদ্ধ আবু নাঈম সোহাগ। ১০ কোটি টাকা খরচ না করেই ভুয়া হিসাব বিবরণী ক্রীড়া পরিষদে জমা দিয়েছে বাফুফে। সেই সঙ্গে বাজেটে বরাদ্দ বাকি ১০ কোটি টাকা চেয়ে চিঠি দেয় ফুটবল সংস্থাটি। বাফুফের চিঠি পেয়ে নড়েচড়ে বসে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সরকারের বাজেটে অর্থ এক খাত থেকে অন্য খাতে খরচের সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, খরচের বিল ভাউচারের পাকা রশিদ জমা না দেওয়া পর্যন্ত বাকি অর্থ ছাড় করা যাবে না। ক্রীড়া পরিষদ এ সিদ্ধান্তের কথা বাফুফেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। বিল ভাউচার জমা না দিয়েই বাকি ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে নিতে তৎপরতা চালিয়েছিলেন বাফুফের কর্মকর্তারা। কয়েক দফা যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন।

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বাজেটের বাকি ১০ কোটি টাকা বাফুফের অনুকূলে ছাড়করণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। খরচের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী না পাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী কিস্তির টাকা চাওয়ার কোনো নজির নেই। সরকারি অর্থ বরাদ্দের এ শর্তের কথা হয়তো বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় কিস্তির ১০ কোটি টাকাও ছাড় করে। তখন বাফুফে ক্রীড়া পরিষদের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, দ্বিতীয় কিস্তির ১০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত হিসাবে রাখা হবে। ওই স্থায়ী আমানত থেকে পাওয়া লভ্যাংশ ফুটবলের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। কিন্তু ঘটেছে ঠিক উলটো ঘটনা। ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর লংকা-বাংলা ফাইন্যান্সে ১০ কোটি টাকার মধ্যে এক বছর মেয়াদি ৯ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত রাখা হয়। বাকি এক কোটি টাকা খরচ দেখায় বাফুফে।

বছর ঘুরতেই (৭ সেপ্টেম্বর ২০২১) স্থায়ী আমানত ভেঙে ফেলে বাফুফে। শুধু তাই নয়, নয় কোটি টাকার আমানতের বিপরীতে কয়েক দফা ঋণ নেয় বাফুফে। ফলে মেয়াদ শেষে লভ্যাংশ দূরে থাক, মূল টাকা পাওয়াই দায় হয়ে পড়েছিল বাফুফের। প্রায় দুই বছর আগে সরকারি বরাদ্দের ওই টাকা হাপিস করে ফেললেও বিষয়টি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে থেকে যায়। গণমাধমের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর এই অনিয়ম উঠে আসে। বিষয়টি শুনেই আঁতকে ওঠেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহ। তার কথা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা ২০ কোটি টাকা যে শর্তে দেওয়া হয়েছিল, তার ব্যত্যয় কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। আমরা বাফুফের কাছে কৈফিয়ত চাইব। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসব অনিয়মের পরও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত বাফুফে গত বছর ৫৮৭ কোটি টাকার প্রকল্প বানিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জমা দিয়েছিল।ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সেই প্রকল্প পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু বাফুফের নয়ছয়ের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের সম্মতি দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়।

বাফুফের এ ধরনের কর্মকাণ্ড এটাই প্রথম নয়। ফুটবল একাডেমি করার জন্য সিলেটে বিকেএসপি পেয়েছিলো বাফুফে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করে একাডেমির জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে দিয়েছিলো। ফিফাও অনুদান দিয়েছিলো সাত লাখ ডলার। কিন্তু সেই সাত লাখ ডলারও আত্মসাৎ করে বাফুফে। বাফুফের কোনো অডিট রিপোর্টেই একাডেমি পরিচালনার জন্য ফিফার দেওয়া সাত লাখ ডলারের কথা উল্লেখ নেই। কয়েক মাস নামকাওয়াস্তে চালিয়ে একাডেমিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি