প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আদালতের নির্দেশনা পালনে দেশের নির্বাহী বিভাগসহ সকলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও রায় কার্যকর না হওয়া দুঃখ জনক।
রায় কার্যকর করতে বার বার কেন আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করতে হবে? তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সবার দায়িত্ব হলো সুপ্রিমকোর্টের রায় কার্যকর করা। আমরা কন্টেম্পট করে করে হয়রান। কন্টেম্পট করেও সঠিকভাবে রায় কার্যকর যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। এটা এখন দু:খের বিষয়। গতকাল শনিবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির লেখা দুটি বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
গত এক দশকে বেশ কিছু যুগান্তকারী রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ঐ রায়গুলো কার্যকর কতটা হচ্ছে অনুষ্ঠানে এমন প্রশ্ন করেন লেখক সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। সঠিকভাবে রায় কার্যকর হয় কিনা তা দেখভালের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারি সম্পত্তি আসলে সরকারি না। সম্পত্তির মালিক হলো জনগণ। সরকার হলো সংরক্ষণকারী। জনগনের পক্ষে সরকার সম্পত্তি সংরক্ষণ করে। এই সরকারি সম্পত্তি সংরক্ষণ করা কিন্তু সকলের দায়িত্ব। আমি বলতে চাই- আমাদের যেসব রায় হচ্ছে আশা করি নির্বাহী বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রত্যেকটা রায় বাস্তবায়িত হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের বিশাল অর্জন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি জাগ্রত করতে হয় তাহলে কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কথা আনতে হবে। বাংলাদেশ কোন খুনিদের দেশ নয়, এটা বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ। বঙ্গবন্ধুর এই সোনার দেশ অবশ্যই আমরা রক্ষা করবো। বিচার বিভাগ এ বিষয়ে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে আপনাদের কথা দিতে পারি।
আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ইমান আলী বলেন, দেশের প্রতিটি জায়গায় দুর্নীতি বিদ্যমান। পরিবর্তন যদি করতে হয় আমাদেরই করতে হবে। পরিবর্তনের চাবিকাঠি আমাদের হাতেই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদেরই গড়তে হবে।
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, গত এক দশকে হাইকোর্টে জনস্বার্থে কিছু যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। আমি প্রশ্ন করতে চাই আপনারা কি কখনো দেখেছেন আপনাদের রায়গুলো কার্যকর করা হয় কিনা। এটিও কিন্তু একটি বিচারিক বিষয়। জনস্বার্থে করা রায় গুলো প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা তার জন্য একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটা সেল গঠন করা যেতে পারে। যেখানে রায় কার্যকর হচ্ছে কিনা তার রিপোর্ট জমা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রচিত ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ একজন যুদ্ধ শিশুর গল্প এবং অন্যান্য’ এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ‘বঙ্গবন্ধু সংবিধান আইন আদালত ও অন্যান্য’ দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বই দুটি প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স।
বই দুটির উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচকরা বলেন, দুজন বিচারপতি শিক্ষকের ভ‚মিকা পালন করেছেন। উনাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে যেসব তথ্য পাচ্ছি এগুলোই প্রকৃত তথ্য। কারন দুজনই রাজনৈতিক পরিবারের জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন। দুজনই বঙ্গবন্ধুকে কাছ থেকে দেখেছেন। ভবিষ্যতে দলিল হিসেবে বই দুটি অনেক পাথেয় হবে বলেও মনে করছেন তারা।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু প্রমুখ। এসময় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ ও সিনিয়র আইনজীবীরা। অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে কথা বলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।