কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাঁশজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ কিশোরী। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপের কৃতি খেলোয়াড় তারা। দেশ সেরা খেলোয়াড় হয়েও অবহেলা আর নজরদারীর অভাবে তাদের অধিকাংশ ফুটবলার বাল্যবিয়ের কারণে হারিয়ে গেছে ফুটবল জগৎ থেকে। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং দারিদ্রতার কাছে হার মেনে বাল্যবিয়ে দেন তাদের বাবা মা।
বিগত ২০১৭ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপে কয়েক ধাপে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেন স্মরলিকা পারভীন। দলের পাশাপাশি হ্যাটট্রিক কন্যা খ্যাত সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে সে ও তার দল। ফুটবল মাঠের পরিবর্তে স্বরলিকা ও তার দলের ৭ জন কিশোরী খেলা বাদ দিয়ে সংসার জীবনে নাম লিখেছে।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে হাইস্কুলে যেতে না যেতেই তাদের বাল্যবিয়ে হওয়ায় হারিয়ে গেল খেলোয়াড় জীবন। জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্তবর্তী সাবেক ছিটমহল দীঘলটারীর দক্ষিণ বাঁশজানী গ্রাম। গত ৩ বছর আগে ২০ জন কিশোরী ফুটবলার হিসেবে অংশ নেয় এ খেলায়। পরিচিতি পায় নারী ফুটবলার গ্রাম হিসেবে। স্মরলিকার নেতৃত্বে আসে জাতীয় পুরস্কাসহ নানা মেডেল ও ক্রেস্ট। ভারত-বাংলাদেশ বিলুপ্ত ছিটমহলের নতুন বাংলাদেশিদের কাছে পাওয়া প্রথম উপহার আসে স্মরলিকা পারভীনের হাত ধরেই। ইউনিয়ন ও উপজেলার এবং জেলায় প্রতিযোগিতা করে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে যায় বাঁশজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই দলটি। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সোনাদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেখানেও হ্যাটট্রিক করে অধিনায়ক স্বরলিকা। সেমিফাইনালে হেরে গিয়ে স্থান নির্ধারনী ম্যাচে চট্টগ্রামের বাঁশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৪-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করে বাঁশজানি দল। এখানেও হ্যাটট্রিক করে কিশোরী। মহামারী করোনায় স্বম্ভাবনাময়ী এই দলের কোন খোঁজ-খবর না রাখায় দারিদ্রতার কষাঘাতে বাধ্য হয়েই পরিবার থেকে বাল্যবিয়ে দেয়া হয়। মেয়েদের বয়স কম থাকায় বিয়ে নিবন্ধন করতে না পেরে ধর্মীয় রীতিতে বিয়ে দেয়া হয় তাদের। কৃষি শ্রমিক স্বরলিকার বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অভাবি মানুষ। করোনার সময় কাজ ও অর্থের অভাব বেড়ে যায়। তাই ভালো পাত্র পাওয়ায় স্বরলিকার বিয়ে দিয়েছি। সন্তানদের জন্য কোন ধরনের সহযোগিতা এবং সরকারি-বেসরকারিভাবে খোঁজ খবর না রাখায় অনেকেই মেয়ের বিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। এ করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোন ধরনের খেলার সুযোগ ও প্রশিক্ষণ এমনকি এই দুর্দিনেও তাদের কিংবা পরিবারের খোঁজ রাখেনি কেউ। ফলে গত তিন মাসে বাঁশজানি দলের অধিনায়ক ১০ম শ্রেণি পড়ুয়া স্বরলিকা, ১০ম শ্রেণির জয়নব, ৯ম শ্রেণির শাবানাসহ ৮ম শ্রেণির রত্না, আঁখি, শারমিন এবং আতিকার বিয়ে হয়ে গেছে। স্বরলিকা বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল একজন ভালো খেলোয়াড় হব। তা আর হলো না। গ্রামের মানুষের কথা ও সামাজিকতার কারণে জাতীয় দলে খেলার আশা আর পূরণ হলো না।
এ ব্যাপারে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব জানান, আমাদের এ বিষয়ে কোন জনপ্রতিনিধি বা কেউ জানাননি। ফলে আইনী পদক্ষেপ সময়মত নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বাকি খেলোয়াড়রা যেন বাল্যবিয়ের শিকার না হয় সেজন্য নজরদারি করা হবে।