অথচ ম্যাচের আগে কতই না আত্মবিশ্বাসী ছিল বায়ার্ন মিউনিখ!
নিজেদের মাটিতে খেলা, তাই প্রথম লেগে ১-০ লেগে হারার পরেও সেমিফাইনালে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন নয়্যার-মুলাররা। কারণ আর কিছুই না, নিজেদের মাঠ আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা। যে মাঠে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ভুরি ভুরি কাব্য রচনা করেছে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা, এবারও সে মাঠ তাঁদের খালি হাতে ফেরাবে না, এমন আশাই করেছিলেন বায়ার্নের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচ, কর্তাব্যক্তিরা। ভেবেছিলেন, আলিয়াঞ্জ অ্যারেনার মতো ঐতিহ্যবাহী মাঠে প্রায় ৭০ হাজার সমর্থকদের চিৎকারে খেই হারিয়ে ফেলবে ভিয়ারিয়ালের মতো পুঁচকে দল।
কিন্তু কীসের কি! সেই ভিয়ারিয়ালের গর্জনই ধ্বনিত হলো আলিয়াঞ্জ অ্যারেনার আনাচে-কানাচে। নির্দিষ্ট করে বললে, নাইজেরিয়ান উইঙ্গার সামু চুকভেজের। নাইজেরিয়ান এই উইঙ্গার ৮৮ মিনিটে গোল করেই যে হিসেব-নিকেশ বদলে দিয়েছেন সব!
অথচ শুরুতে গোল পেয়েছিল বায়ার্নই। আর দশটা ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও প্রথমে গোল করে বায়ার্নকে এগিয়ে দিয়েছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। অপেক্ষা ছিল আরও অন্তত একটি গোলের, সেটা হলেই দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ ব্যবধানে পরের রাউন্ডে উঠে যেত বায়ার্ন। ব্যবধান ২-১ হলো ঠিকই, তবে গোটা টাই-এর ভাগ্য হেলে গেল ভিয়ারিয়ালের দিকে। বায়ার্নের মাঠে আসা প্রায় সত্তর হাজার দর্শকের চিৎকার ভিয়ারিয়াল খেলোয়াড়দের মনে কাঁপন ধরাল না। ৮৮ মিনিটে গোল করে দ্বিতীয় লেগের স্কোরলাইন ১-১ করে ফেলল হলুদ সাবমেরিনরা। আর তাতেই দুই লেগ মিলিয়ে ২-১ ব্যবধানে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে গেল ভিয়ারিয়াল।
যে উনাই এমেরি এতদিন ইউরোপা লিগের নকআউট রাউন্ডে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সুবিদিত ছিলেন, সেই উনাই এমেরির ঝলক এবার দেখা গেল চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে। আর তাতে দিবালা-কিয়েল্লিনিদের জুভেন্টাসের পর ঝলসে গেল লেভানডফস্কিদের বায়ার্ন মিউনিখ। পোলিশ এই স্ট্রাইকার ব্যালন ডি অর জয়ের আশাতেও কী বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন যুক্ত হয়ে গেল না?
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে ভিয়ারিয়ালের মুখোমুখি হচ্ছে লিভারপুল ও বেনফিকা ম্যাচের জয়ী দল, প্রথম লেগ জিতে যেখানে লিভারপুল বেশ সুবিধাজনক অবস্থাতেই আছে।
অথচ সামু চুকভেজে ম্যাচের মূল একাদশেই ছিলেন না। ৮৪ মিনিটে খেলায় গতি বাড়ানোর জন্য ফরাসি মিডফিল্ডার ফ্রান্সিস কোকুইলানের জায়গায় নামানো হয় এককালে লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবগুলোর নজরে থাকা চুকভেজেকে। কোচের আস্থার প্রতিদান কী দুর্দান্তভাবেই না দিলেন এই উইঙ্গার!
পুরো ম্যাচে ২৩টা শট নিয়েছে বায়ার্ন, বলে দখল ছিল ৬৮ শতাংশ সময়ে। কিন্তু ২৩ শটের মধ্যে মাত্র চারটাই ছিল গোল বরাবর। ওদিকে ভিয়ারিয়াল চারটা শটের মধ্যে মাত্র একটাই লক্ষ্যে রাখতে পেরেছিল, ওই একটা শটেই গোল! আর তাতেই ২০০৬ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিতে উঠে গেল ভিয়ারিয়াল।