হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ কেন বিএনপি`র সমালোচনায় মুখর হলো? বিএনপিকে কেন আক্রমণ করছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ভবিষ্যতের রাজনীতির একটি রূপ পরিকল্পনা পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে বিএনপি আন্দোলন করতে পারে, নির্বাচন ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়েই আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, ক্ষমতাসীন দলটির প্রধান প্রতিপক্ষ এখনো বিএনপিই। আর তাই বিএনপিকে কোনোভাবেই দাঁড়াতে দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগ এখন বিএনপিকে প্রধান টার্গেট করেছে। পুরো আগস্ট মাস জুড়ে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সমালোচনার মূল কেন্দ্র ছিল বিএনপি। আর এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা রকম কথা উঠেছে। অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন যে, মৃত বিএনপিকে জীবিত করার জন্যই আওয়ামী লীগ কাজ করছে। এরকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, না আওয়ামী লীগ একটি পরিকল্পিত ভাবেই বিএনপিকে সমালোচনা করেছে। এর কারণগুলো হলো,
১. আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি: আওয়ামী লীগের কাছে এ ধরনের খবর এসেছে যে, বিএনপি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করতে চেষ্টা করছে এবং সরকারের ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করার বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। বিএনপি যেন এ ধরনের আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে না এগুতে পারে সেই জন্য শুরুতেই বিএনপিকে আক্রমণ করে হতোদ্যম করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। এটি একটি কৌশলগত প্রক্রিয়া।
২. দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র: আওয়ামী লীগের কাছে এরকম যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে যে, বিএনপি এবং জামায়াত বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন এবং কানাডা থেকে লাগাতারভাবে সামাজিক মাধ্যমে কুৎসা রটনা এবং অপপ্রচার করা হচ্ছে। আর এই অপপ্রচারের পাল্টা আঘাত হিসেবে আওয়ামী লীগ এখন বিএনপিকে আক্রমণ করছে।
৩. সামনে নির্বাচন: আগামী নির্বাচনের আর ২ বছরের কিছুটা বেশি সময় রয়েছে। কাজেই নির্বাচনের এখন প্রস্তুতি হিসেবে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, তার প্রধান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে আগে থেকেই ধরাশায়ী করে রাখতে, কোণঠাসা করে রাখতে। বিএনপিকে কোণঠাসা করার কৌশল হিসেবেই এই সমালোচনা বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
৪. আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল: আওয়ামী লীগ জানে যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি খুশি হয় বিএনপিকে প্রতিপক্ষ করে আন্দোলন বা কর্মসূচিতে। আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেক বেশি। বিশেষ করে প্রতিটি জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম বিভক্তির কথা শোনা যায়। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপিবিরোধী কথাবার্থা নেতাকর্মীদের বিরোধ ভোলানোর ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কাজ করবে বলে অনেকে মনে করছেন।
৫. রাজনীতিকে সামনে নিয়ে আসা: বর্তমানে দেশে রাজনীতি নেই এবং রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি না থাকার ফলে বিরাজনীতিকরণ বেশি উৎসাহিত হচ্ছে, সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ধরনের কথাবার্তাও এসেছে যে, আমলারা এখন অনেক ক্ষমতাবান। আর এ কারণেই রাজনীতিকে সামনে আনতে রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে জোরদার করা হচ্ছে। আর রাজনৈতিক ইস্যু সামনে এলেই বিএনপি`র সমালোচনা হবেই। এ কারণেই এখন আওয়ামী লীগ বিএনপি`র সমালোচনায় মুখর রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিকে আরো কোণঠাসা করতে চায়। বাংলাদেশে রাজনীতি যারা করবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করবে, বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস করবে তাহলে তারা রাজনীতি করতে পারবে। বঙ্গবন্ধুকে বিশ্বাস না করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস না করে কেউ রাজনীতি করলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। আর এই কৌশলের অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগ আসলে বিএনপিকে টার্গেট করেছে।