তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি বেগম খালেদা জিয়াকে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে চায় যেন সেখান থেকে তিনি বেআইনিভাবে রাজনীতিটা করতে পারেন, যেটি তারেক রহমান করছে। আমরা আপনাদের ফন্দি-ফিকির বুঝি।
‘বিএনপি’র দাবি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত নয়, রাজনৈতিক; কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর, বলেন তিনি।
রোববার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের দারুস সালাম থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ ইউনিটের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসকল কথা বলেন।
‘বিএনপিনেতারা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে নানা কথা বলে, অথচ গত একবছর ধরে বেগম জিয়া তাদের তত্ত্বাবধানে, বেগম জিয়ার পছন্দের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘সেকারণে তার কিছু হলে সেজন্য তারাই দায়ী। বিএনপি নানা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়, জনগণ বিভ্রান্ত হবে না।’
ড. হাছান বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে বিএনপি’র রাজনীতিটা আর জনগণের জন্য নয়, একমাত্র খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য। গত ১৫-২০ দিন ধরে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য যদি শোনেন তাহলে দেখতে পাবেন, অন্য কোনো বক্তব্য নেই, খালেদা জিয়ার কি হয়েছে সেটিই তারা প্রতিনিয়ত বলছেন। গতকাল টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম মির্জা ফখরুল সাহেব বলছেন, খালেদা জিয়ার পেটে কি কি সমস্যা হয়েছে। এখন মির্জা ফখরুল, রিজভী, গয়েশ্বর সাহেবও বড় ডাক্তার হয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। আজ মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, যে বেগম খালেদা জিয়াকে না কি আইনের ধারা বলে বিদেশে পাঠানো যাবে। এখন মনে হচ্ছে ফখরুল সাহেব ডাক্তার নয় ভেতরে ভেতরে ব্যারিস্টারও হয়েছেন, আইনেরও ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করেছেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান এসময় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কেউ যাতে ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য সবাইকে চোখ-কান খোলা রেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সুযোগ সন্ধানীদের দলের মধ্যে দরকার নেই। যারা পিঠ বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগ করতে চায়, যারা জায়গা দখল করার জন্য কিম্বা দখল করা জায়গা রক্ষার জন্য বা সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ করতে চায় তাদের দরকার নেই। যারা আমাদের আদর্শ, উদ্দেশ্য, নীতিতে বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ করতে চায়, তাদেরকেই আওয়ামী লীগে দরকার আছে।’
বক্তব্য শেষে সাংবাদিকরা ‘ছাত্রদের হাফভাড়া নিয়ে বাস মালিকরা বিশেষ প্রণোদনা চাচ্ছেন’ এবিষয়ে প্রশ্ন করলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমি নিজেও বাসে হাফ ভাড়া দিয়ে চলেছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় শহর থেকে বাসে যেতাম হাফ ভাড়া দিয়ে। তখন সরকার বাস মালিকদের কোনো প্রণোদনা দিতো না। বাস মালিকরাও প্রণোদনা দাবি করে নাই। তারা বিনা প্রণোদনাতেই ছাত্রদেরকে হাফ ভাড়া দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আজকে কেন প্রণোদনা লাগবে সেটি আমার ব্যক্তিগত জিজ্ঞাসা। একটি বাসে ৪০ থেকে ৫০জন যাত্রী থাকে সেখানে দু-তিন-পাঁচজন ছাত্র থাকে এবং এতে বাস মালিকদের কি অসুবিধা হবে, সেটি আমার ব্যক্তিগত প্রশ্ন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদের প্রতি সহানুভূতিশীল, সরকার সহানুভূতিশীল এবং সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী সরকারি সংস্থা বিআরটিসি’র ভাড়া হাফ করে দিয়েছেন। যারা ছাত্র তারা আমাদের সন্তান, তাদেরও সন্তান। আমি আশা করবো, পরিবহনের মালিকরাও তাদের সন্তানদের কথা চিন্তা করে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
দারুস সালাম থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে থানার সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ফরিদুল ইসলাম হ্যাপীর সঞ্চালনায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান সম্মেলন উদ্বোধন করেন। আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বিশেষ অতিথি, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি প্রধান বক্তা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ও এবিএম মাজহারুল আনাম, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত এবং ১০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল আনসারী সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।