নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যা বলার ভালো একটা আর্ট আছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তাদের দলের লোকজন বলা শুরু করল, আমরা নিজেই নাকি গ্রেনেড মেরেছি। এবং তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে ফেলল। ঠিক বিডিআর’র ঘটনা যখন ঘটল তখন তারা ওইভাবেই অপপ্রচার শুরু করল। কিন্তু কোনোদিনই কেউ এর যুক্তি খুঁজে পাবে না। রোববার দুপুরে একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে সাহার খাতুন ও ইসরাফিল আলমের ওপর আনিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে কারা ছিল? আমরা তো কেবল সরকার গঠন করেছি। এটা কোনদিনই যুক্তিযুক্ত না যে, আমরা সরকার গঠন করেই এমন একটা ঘটনা ঘটাব; দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করব। কাজেই যারা তখন ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারাই তখন ঐ ঘটনার পেছনে ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
সাহারা খাতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, ‘তার সাহসী ভূমিকা দেখেছি বিডিআর বিদ্রোহের সময়। আমরা সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মধ্যে বিডিআর’র ঘটনা ঘটল। ঐ ঘটনায় যে সেনা অফিসাররা মারা যান তাদের মধ্যে ৩৩ জন আওয়ামী লীগ পরিবারের। এমনকি বিডিআর’র ডিজি এই পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য লুৎফর হাই সাচ্চুর আপন চাচাতো ভাই ছিলেন। দেখা গেছে, আমাদের আওয়ামী পরিবারের এমনকি আব্দুল মালেক উকিল সাহেবের নাতিসহ অনেকেই সেখানে মৃত্যুবরণ করে। ঐ সময় ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চেষ্টা ছিল এটাকে থামানো। চেষ্টা ছিল অফিসার ও তাদের পরিবারগুলো রক্ষা করা। আমরা যখন সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ করলাম তারা নামার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহীদের গুলিতে কয়েকজন সেনাসদস্য মারা গেল।’
বিডিআর বিদ্রোহের সময় সাহারা খাতুনের সাহসী ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাহারা আপাকে দেখেছি সাহসে ভর করে সেখানে গেছে। রাতের বেলায় অনেক সাহস নিয়ে সেখানে গিয়ে বিডিআর’র বিদ্রোহীদের অস্ত্রসমর্পণ করতে বলেন এবং তারা করেন। সেদিন অনেক আর্মি পরিবারকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। উদ্ধার করতে গিয়ে জীবনের ওপর হুমকি এসেছে। আমি তখন যমুনায় থাকি। তিনি বললেন, নেত্রী কোন মতো জীবনটা নিয়ে বেঁচে এসেছি। তার ওপরেও হামলা করতে গিয়েছিল ওরা। এই অবস্থায় দুঃসাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন সাহারা আপা।’
সাহারা খাতুনের কর্মদক্ষতা নিয়ে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সততার সঙ্গে তিনি কাজ করেছিলেন। বিএনপির আমলে বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, এক সাথে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের রাজত্বের পর আসে ১/১১। এই অবস্থার পর তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিয়ে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে নিয়ে আসেন। মানুষের জীবন যাত্রাটাকে স্বাভাবিক করা এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো কঠিন সময়ে কঠিন দায়িত্ব পালন করে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন সাহারা আপা। তিনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, তার কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি সবকিছু নেতাকর্মীদের বিলিয়ে দিয়েছেন। সারাক্ষণ দেশের জন্যই কাজ করেছেন। অত্যন্ত সাহসী একজন মানুষ এবং আমাদের সংগঠনের প্রতি নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিক ছিলেন সাহারা আপা।’
সাহারা খাতুনের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৬ দফার আন্দোলনের সময় এবং ৭০ এর নির্বাচনের সময় সাবেক মন্ত্রী বদরুন্নেছা আহমেদ তারই নেতৃত্বে আমাদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতেন নির্বাচনি প্রচারে। সে সময় ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট। একজনের একটা ভোট এবং ভোট গণনার পদ্ধতি শেখানো হতো। সেখানে সাহারা আপা এবং প্রয়াত আইভী রহমানসহ ৭০’র নির্বাচনে জাতির পিতা যে আসনে প্রার্থী ছিলেন সেখানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। এরপর ১৯৮১ সালে আমি ফিরে আসার পর থেকে সাহারা আপাকে সবসময় পাশে পেয়েছি। যারা সবসময় আমার পাশে ছিলেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। একে একে সবাই চলে যাচ্ছে, এটাই হচ্ছে দুঃখ।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সাহারা খাতুন ভূমিকা রাখতেন। কোনো ভয়ভীতি তার ছিল না। এরশাদ যখন ক্ষমতায় তখনও তার ওপর লাঠিচার্জ, অত্যাচার, নির্যাতন এমনকি পিটিয়ে ডাস্টবিনের মধ্যে ফেলে পা ভেঙে দিয়েছে। খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় এলো তখনও তার ওপর সীমাহীন অত্যাচার হয়েছে। একদিকে পুলিশবাহিনী আরেক দিকে ছাত্রদলের ক্যাডারবাহিনী। কারণ এটা তো তিনি নিজেই বলতেন, ছাত্রদল দিয়েই নাকি আওয়ামী লীগকে সোজা করে দেবেন।’
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন আমাকে গ্রেফতার করে একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আমার বিরুদ্ধে ১২টা মামলা দেওয়া হয়। আর সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকার আসার পর দেওয়া হয় আরও ৫ থেকে ৬টি মামলা। তাদের একটা প্রচেষ্টা ছিল, যতদ্রুত মামলাগুলো করে একটা শাস্তি দিয়ে দেবে। বলতে গেলে একদিন পর পর আমাকে কোর্টে হাজির করত। এই মামলাগুলো সাহারা আপা সর্বক্ষণ উপস্থিত থাকতেন। তার সাহসী ভূমিকা দেখেছি।
আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইসরাফিল আলম এত অল্প বয়সে সে চলে যাবেন বুঝতেই পারিনি। তার করোনা হয়েছিল। করোনা হয়ে ভালোও হয়েছিল। কিন্তু আসলে তার কিডনির সমস্যা ছিল। সে কিছু মানেনি। যখন সে একটু সুস্থ হলো তখন সে এলাকায় চলে গেলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে আর ফিরে এলো না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী হারিয়েছি এবারের করোনায়। কারণ তারা রিলিফ দিতে গেছে, বন্যার সময় ত্রাণ দিতে গিয়েছে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে। ঠিক ইসরাফিলের ব্যাপারেও তাই। অত্যন্ত মেধাবী ছিল। আমার খুব ইচ্ছে ছিল, ভবিষ্যতে সে একজন ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হবে। এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো পজিশনে সে যেতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগটা আর হলো না। আমরা ভবিষতের একজন ভালো পার্লামেন্টারিয়ান হারালাম।’