আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তারা দেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায়। দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। স্বপ্ন দেখতে দেখতে ১৫ বছর কেটেছে, আগামী কত বছর কাটবে জানি না।
আজ রোববার (১২ নভেম্বর) তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশ কি বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, নাকি আপনারা শেষ পর্যন্ত বিএনপির অংশগ্রহণের জন্য অপেক্ষা করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তাদের এত জনপ্রিয়তা তারা বলেন, সেটি যাচাই করুক। তাদের এত উদ্যোগী কর্মী যারা ২০ মিনিটে ময়দান ছেড়ে চলে গেছেন, তারা কতটুকু নামে আমরা একটু দেখি। তাদের এত জাদরেল নেতা, পুলিশের আওয়াজে- কোনো গুলি হয়নি, কোনো টিয়ার গ্যাসও (নিক্ষেপ) হয়নি, ছোটবেলায় যে বড় বাজি ফোটাতাম সেই বাজির আওয়াজ হয়েছে, সেই আওয়াজে মঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন। তারা নির্বাচনে আসুক, এসে দেখুক তাদের কতটুকু জনপ্রিয়তা। কর্মীরা কতটুকু নামে, এই নেতাদের ওপর কতটুকু আস্থা রাখে। আমরা চাই তাদের সঙ্গে নির্বাচন করতে। নির্বাচনের সিডিউলের মধ্যে তারা এলে তাদের নিয়েই নির্বাচন হবে।
যদি তারা না আসে? এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি দেশে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য নির্বাচন হতে হবে। কোনো একটি দল না এলেও আরও অনেক দল তো অংশগ্রহণ করবে। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রতিটি শহর প্রতিটি গ্রাম বদলে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশ ধ্বংসের জন্য পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে জনগণের ওপর, জনগণের গাড়ি-ঘোড়ার ওপর এবং তারা কোনো উন্নয়ন দেখতে পায় না।
সবাই মিলে সোচ্চার হয়ে এগুলো বন্ধ করতে হবে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
অবরোধ ডেকে আগের দিনই বিএনপি হামলা চালাচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি কি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে? এগুলোকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বললেও কম বলা হয়। তারা রাস্তায় নেমে এসে ব্যারিকেড দিক। আমরা অবরোধ দেখেছি, আপনারা পালন করুন। সেটি তো তারা করে না, চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না।
বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের বিবৃতির বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, তাদের (বিএনপি) আন্দোলন করার অধিকার আছে। সরকারের পদত্যাগ চাওয়ার অধিকার আছে, আমার পদত্যাগ চাওয়ার অধিকার আছে। সেই অধিকার মানে তো গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানো নয়। এটিকে কেউ সমর্থন করেনি, করে না। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের অনেকে তাদের এ কর্মকাণ্ডকে কনডেম করেছে। তারা অনেককে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে কেউ সমর্থন করে না করতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বৈঠকের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতে যে বৈঠকটি হয়েছে সেটি ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। সেই বৈঠকের বিষয় একান্তই তাদের। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে সেটি পত্রপত্রিকায় এসেছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন, উন্নয়ন- এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অবশ্যই ভারত যেটি বলেছে, যথার্থ বলেছে। বাংলাদেশের জনগণের ঠিক করবে নির্বাচনের মাধ্যমে কারা ক্ষমতায় আসবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়েছে- এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকারের হাতে নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনের হাতে, আদালতের হাতে। সরকার চাইলেই তো মুক্তি দিতে পারবে না। সরকারের কাছে যেটুকু ক্ষমতা ছিল সেটা দিয়ে তার সাজা স্থগিত রেখে তাকে ঘরে থাকার ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে, বাকিটা আদালতের বিষয়।
বিএনপি নির্বাচন করতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে- এ বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া সেটি যেকোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার এখতিয়ার কারো নেই। নির্বাচন প্রতিহতের কথা বলা মানেই দেশবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী কথাবার্তা। সুতরাং দেশবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী বক্তব্য যারা রাখবে কিংবা অপচেষ্টা চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। সরকার, জনগণ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে অব্যাহত রাখা। সেজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, সেগুলো করা হবে।