দেশের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন আর লেনদেন খরা দেখা দেওয়ায় তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির এই পদক্ষেপর পর শেয়ারবাজারে দরপতন যেমন থেমেছে, তেমনি লেনদেনের গতিও বেড়েছে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দশ কার্যদিবস পর হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিলেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। পাশাপাশি লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে।
এর আগে বিভিন্ন ইস্যুতে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন দেখা দেয়। মাত্র আট কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৯২ পয়েন্ট পড়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। একই সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে আরও ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়মের ফলে এখন থেকে একদিনে কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বা ইউনিটের দাম দুই শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। এই নিয়ম চালুর পর প্রথম কার্যদিবস বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ১৫৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারির পর একদিনে সূচকটির এতো বড় উত্থান আর দেখা যায়নি।
সার্কিট ব্রেকারের নতুন নিয়ম চালু করার পাশাপাশি বুধবার বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তাদের (সিএফও) সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়াবে।
এ বিষয়ে বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গনমাধ্যমকে জানান, বৈঠকে তিনটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- শেয়ারবাজারে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ নির্ধারিত বিনিয়োগ সীমার নিচে রয়েছে, তারা কয়েকদিনের মধ্যে ২ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে।
এছাড়া এক্সপোজারের বাহিরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য যেসব ব্যাংক এখনো ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেনি তারা দ্রুত এই তহবিল গঠন করবে। তবে যারা গঠন করেছে সবাই মিলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শেয়ারবাজারে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য যতটুকু বিনিয়োগ করা দরকার, সবাই সেই বিনিয়োগ করবে।
একই সঙ্গে বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, অতিরিক্ত টায়ার-১ এবং টায়ার-২ এর জন্য যে সব ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করবে, সেগুলো সুপারফাস্ট প্রসেস করে দেওয়া হবে। এছাড়া ব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর জন্য অন্য যেসব বিষয় জড়িত সেসব বিষয়ে কমিশন সার্বিক সহযোগিতা করবে।
বিএসইসি থেকে এমন ঘোষণা আসার পর বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। এতে লেনদেনের ৪০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের তুলনায় ১১০ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
এরপর এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ বাড়ায় কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। এতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও কমে আসে। তবে সবকটি সূচক ঊর্ধ্বমুখী থেকেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৮ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৬৬৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে দুই হাজার ৪২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪৭টির। আর ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে আবার হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনের দেখা মিললো।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের ৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪০ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডিকম।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জিনেক্স ইনফোসিস, ওরিয়ন ফার্মা, ইউনিয়ন ব্যাংক, অগ্নি সিস্টেম, ড্রাগন সোয়েটার এবং কুইন সাউথ টেক্সটাইল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৬১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৮৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭১টির এবং ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।