1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

বিকাশ’র যত নয়-ছয় : বর্গম্যান নাকি পরিচালক

বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপডেট : রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১

বিকাশ ! ডিজিটাল মানি লেনদেনের কোম্পানি। অর্থ লেনদেনের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল প্লাটফর্ম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার মানি ট্রান্সফার। জনগনের দ্বারে দ্বারে আর্থিক লেনদেন সেবা পৌঁছে দেয়া। কিন্তু বিকাশ ডিজিটাল প্লাটফর্মের সুযোগ নিয়ে নিত্য প্রতারণা, গোপন প্রসেডিং এবং কোম্পানির তথ্য উপাত্ত প্রকাশ না করে একচেটিয়া ব্যবসা করছে। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ, মানি লন্ডারিং, জঙ্গি অর্থায়ন, লাভ নিয়ে লুকোচুরির ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে।

বিকাশ কাগজেপত্রে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি পায় ২০১০ সালে। কোম্পানির ৫১ ভাগ শেয়ার তথা মূলধন মালিকানা দেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্র্যাকের থাকার নিয়ম ছিল। বাকি ৪৯ ভাগ-শেয়ার বিদেশী বিনিয়োগের জন্য ছাড় দেয়ার অনুমতি ছিল। ১০ বছরেও জানা যায়নি বিকাশ-এ বিদেশী বিনিয়োগের শেয়ার কত, কত টাকা বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। এসবের কোন তথ্য বিকাশ কর্তৃপক্ষের পক্ষে কেউ বলতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে না বিকাশ’র বিদেশী বিনিয়োগে’র পরিমান কত। যদিও বিকাশ’র পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল (অব:) শেখ মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিকাশ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি ও লাইসেন্স মেনেই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। শর্ত ভঙ্গের কোন ঘটনা ঘটেনি। আর বিদেশী বিনিয়োগের তথ্য-তিনি দিতে পারছেন না। কারণ এটি ফাইন্যান্স বিভাগ দেখেন।

সংবাদ পর্যালোচনায় তথ্যানুসন্ধান জানা গেছে, বিকাশের হরেকমুখী শেয়ারের নামকরণ করে তারা বিভিন্ন সময় শেয়ারে পরিবর্তন করে বিভিন্ন প্রেফারেন্স শেয়ারকে সাধারণ শেয়ারে পরিণত করেছে। এর ফলে বিকাশের দেশীয় ৫১ ভাগের শেয়ার কমে গিয়ে বিদেশী শেয়ারের মালিকানা বেড়ে যাবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এতে লাইসেন্সের ব্যত্যয় ঘটে। এদিকে বিকাশ’র মানি লন্ডারিং বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিকাশ’র মার্কেটিং প্রমোশনের জন্য অ্যাপ ক্রয় করে বেশী টাকা প্রেরণ করা হয়েছে। সাংবাদিক শ্যামল দত্তের ভাষায় বিকাশ যেসব অ্যাপ বিদেশ থেকে আমদানি করছে। সে ধরণের অ্যাপ দেশে বানানো যায়। অ্যাপ আমদানি করতে ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ের যে ফর্মুলা দেখানো হয়েছে। সেটি বাস্তব সম্মত নয়। এই অ্যাপস আমদানির মাধ্যমে মানি লন্ডারিং এর ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক নয়।
এদিকে বিকাশ’র লাভের হিসাবে অঙ্ক না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। কোম্পানি’র লাভ-লোকসান মূলধন, বিনিয়োগের খাত প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। কোম্পানি এসব প্রদর্শনের কথা থাকলেও বিকাশের ওয়েব তথ্য নেই। এমন কি ব্র্যাক ব্যাংকের ডিজিটাল মাধ্যমেও এসব ওয়েবে সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিকাশের তিনটি বিদেশী কোম্পানি বিনিয়োগের তথ্য ওয়েবে কোন কোম্পানি কত টাকা বিনিয়োগ করেছে, সে তথ্য বিকাশের হিসাবে দেখানো হয়নি। এছাড়া বিকাশ’র সংশ্লিষ্ট বিদেশী কোম্পানি গুলো বিনিয়োগ করেছে কিনা, সে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক দিতে পরেনি।
বিকাশ’র বিদেশী একটি কোম্পানি’র পরিচালক হিসেবে ডেভিড বর্গম্যানের নাম থাকলেও বিকাশের পক্ষে শেখ মনিরুল ইসলাম অস্বীকার করেছেন। ডেভিড বর্গম্যান দেশের প্রখ্যাত আইনজীবি ড. কামালে’র মেয়ে ব্যরিস্টার সারা হোসেনের স্বামী। ডেভিড বর্গম্যানের সম্প্রতি ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার ম্যান’ নামে আল জাজিরা’র যে সিনেমাটি প্রচার করেছে। সেই সিনেমায় ডেভিড বর্গম্যানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি এই সিনেমাটি নির্মাণের নেপথ্যে কারিগর।
বিকাশের লাগাতার এসব অনিয়মে’র বিষয়ে একাত্তর টিভি’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। যদিও কোনটাই পরিষ্কার করতে পারেনি। কারণ তথ্য উপাত্ত না পাওয়ায়। রিপোর্টার ফারজানা রুপা প্রচণ্ডভাবে চেষ্টা করেও সঠিক তথ্য উপাত্ত পায়নি। বিকাশ কর্তৃপক্ষ গোপন রাখছে সবকিছু। বিকাশ’র এই লুকোচুরির বিকাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ-আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী দায় এড়াতে পারে না বলে আইনজীবিরা মনে করেন।
বিকাশ’র ওয়েব সাইটে বিকাশ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণার পত্র হিসেবে সংক্ষিপ্তকার একটি সাইটেশন দেয়া আছে। তাতে বিকাশে বিনিয়োগকারী বিদেশী কোম্পানি গুলোর বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বিবরণে বলা হয়েছে আমেরিকার কোম্পানি মানি ইন মোশান এল.এল.সি ২০১০ এবং ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), ২০১৪ সালে বিল অ্যান্ড ম্যালিন্ডা গ্যাটস ফাউন্ডেশন।
২০১৮ সালে, অ্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল (আলি’পে) আলী বাবা গ্রুপে’র কোম্পানি বিনিয়োগ করে। কিন্তু কোন কোম্পানি কতটা শেয়ার কত টাকা বিনিয়োগ করেছে। সেসব তথ্য বিকাশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি গণমাধ্যমকে। এ ব্যাপারে বিকাশের প্রধান মিডিয়া রিলেশন শামসুদ্দিন হায়দার আলী বলেছেন, তাকে তথ্য উপাত্ত জানার জন্য চিঠি দিতে হবে। চিঠি ইমেইলে’র মাধ্যমে পাঠালেও হবে। তিনি ইমেল নম্বর দেয়ার কথা ছিল, এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত তিনি ইমেল পাঠাননি। অপর দিকে বিকাশের লিগ্যাল অফিসার ব্যরিস্টার তানজিবুল আলমকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি