একটি মামলার জামিন শুনানির সময় ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ মন্তব্য করা বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের আজ শেষ কর্মদিবস।
সুপ্রিম কোর্টে রীতি অনুযায়ী শেষ কর্মদিবসে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি থেকে বিদায়ী বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয়া হয়ে থাকে। তবে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কোন ধরণের সংবর্ধনা নেবেন না।
রোববার (১৫ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতির দপ্তরকে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ জানান, তার শরীর ভালো নেই, তাই কোর্টে আসবেন না তিনি।
গত ১০ অক্টোবর তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের জামিন শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্টের বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ। একপর্যায়ে এ বিচারপতির আদালত বলেন, দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
এর আগে, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ হাইকোর্টের বিচারপতির এ ধরনের মন্তব্য অসাংবিধানিক ও অসৌজন্যমূলক। এ সময় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে সুপারিশ করেন তিনি।
ওই বিচারকের প্রতি প্রশ্ন রেখে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অনেক চক্রান্ত রয়েছে বিচার বিভাগ নিয়ে। তিনি (হাইকোর্টের বিচারক) কাকে লাভবান করার জন্য এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।
এর আগে, সকালে হাইকোর্টে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের জামিন শুনানি হয়। তখন বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ বলে মন্তব্য করেন।
শুনানির শুরুতে আদিলুর-এলানের পক্ষে জামিন শুনানি করতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এসময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, আসামিদের আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি এখনই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?
এরপর আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এ সময় আবারও জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ করে বলেন, তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না। এক পর্যায়ে আদালত বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
এরপর মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিন দেন আদালত। একইসঙ্গে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও স্থগিত করা হয়।
আদালতে জামিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন ভূঁইয়া।
এ ঘটনার পর প্রধান বিচারপতি তার নিজ খাস কামরায় আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সামনে বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদকে ডেকে সতর্ক করা।প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট কথা বলেন তারা।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খাস কামরায় আসার পর বিচারপতি ইমদাদুল হক আজাদকে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আদালতে বিচারকাজের সময় মন্তব্য করার ব্যাপারে আরও যত্নশীল হতে বলেন প্রধান বিচারপতি।
এদিকে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের এমন মন্তব্যকে ‘অসাংবিধানিক ও অসৌজন্যমূলক’ এবং এতে তার ‘শপথ ভঙ্গ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।