দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা আজ নামছে কাতার বিশ্বকাপ মিশনে। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে লিওনেল মেসির দল। মেসির বিশ্বকাপ জয়ের পঞ্চম ও শেষ মিশনের শুরু আজ।
১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ৩৬ বছর ধরে শিরোপার স্বাদ পায়নি। সর্বশেষ কিংবদন্তি খেলোয়াড় দিয়েগো ম্যারাডোনার জাদুকরী পারফরম্যান্সে আর্জেন্টিনা শিরোপার উৎসবে ভেসেছে। সেই থেকে আর শিরোপা উঁচিয়ে ধরা হয়নি লাতিন দেশটির খেলোয়াড়দের।
এরপর আটটি আসর গড়িয়েছে, দু-দুবার ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টাইনরা, কিন্তু শিরোপা আর ছোঁয়া যায়নি। ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। নব্বইয়ে ম্যারাডোনা ও ২০১৪ সালে মেসি বিশ্বকাপ ট্রফি থেকে হাতছোঁয়া দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ম্যারাডোনা অবশ্য ছিয়াশিতে বিশ্বকাপ জয় করে অমরত্ব আগেই পেয়ে গেছেন। কিন্তু মেসির শোকেসে কোনো বিশ্বকাপ ট্রফি নেই, যা তার ক্যারিয়ারে একমাত্র অপূর্ণতা। আর্জেন্টিনার জার্সিতে কোপা আমেরিকা শিরোপা জয় ছাড়াও বার্সেলোনার হয়ে দশটি লা লিগা, চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন মেসি। বার্সার হয়ে অনন্য পারফরম্যান্সের পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন দু হাত ধরে। বিশ্ব ফুটবলের এই জীবন্ত কিংবদন্তি সাতবার ব্যালন ডি’অর, একবার ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার, একবার দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার, আটবার লা লিগার সর্বোচ্চ গোলের পুরস্কার, পাঁচবার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন সু ঘরে তুলেছেন।
কিন্তু পুরস্কারে ঠাসা শোকেসে শুধু বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটাই নেই! ২০১৪ সালে ব্রাজিলের মাটিতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেও দেশকে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে পারেননি। সেবারের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মেসি। কিন্তু তিনি তো চেয়েছিলেন ট্রফি জিততে। ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে সেবার স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। ব্রাজিলের মাঠে সেরা সুযোগ হারানো মেসির সামনে এবার শেষ সুযোগ। ৩৫ বছর বয়সী সুপারস্টার ঘোষণা দিয়েছেন, কাতারেই খেলবেন নিজের শেষ বিশ্বকাপ। আজ সেই শেষের শুরু।
কাতারে আর্জেন্টিনার সামনে প্রথমেই সৌদি আরব। বিশ্বের অন্যতম সেরা দলটির জন্য সৌদি আরবের বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কথা নয়। তার ওপর আলবিসেলেস্তেরা টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত। লিওনেল স্ক্যালোনির দল সর্বশেষ ৫ ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে। সদ্যই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাঠে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে স্বাগতিকদের ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেন মেসি, দিবালারা।
আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসিদের আগুনে ফর্মের মুখে পড়তে যাচ্ছে সৌদি আরব, যারা এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো খেলবে বিশ্বকাপে। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আসরে অভিষেকেই শেষ ষোলোয় খেলে চমক দেখায় সৌদি আরব। যদিও পরে আরো চারটি আসরে খেলে কখনই নকআউট পর্বে উঠতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
অবশ্য সৌদি আরবকে ছোট করে দেখলে ভুল করতে পারেন মেসিরা। হার্ভে রেনো কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর বদলে দিয়েছেন সৌদি আরব দলকে। আফ্রিকান নেশনস কাপের শিরোপাজয়ী এই কোচ দলটির মধ্যে আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করতে পেরেছেন। তাই তো সর্বশেষ পাঁচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে তারা। এছাড়া বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কাতারের টিকিট পেয়েছে দলটি। কাজেই সৌদি আরব এবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে আর্জেন্টিনাকে।
এখন পর্যন্ত চারবার মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরব। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা দুটিতে জয়লাভ করেছে, বাকি দুটি ম্যাচ অমীমাংসিত ছিল। দুই দলের প্রথম ও শেষ ম্যাচটি ড্র হয়।
এদিকে দিয়েগো ম্যারাডোনার দলের সঙ্গে লিওনেল স্ক্যালোনি ও লিওনেল মেসির এবারের দলটির অনেক মিল খুঁজে পাচ্ছেন সাবেক আর্জেন্টাইন গ্রেট ক্লদিও ক্যানিজিয়া। ম্যারাডোনার সাবেক এই সতীর্থ বর্তমান দলের কোচ স্ক্যালোনির প্রশংসা করে বলেছেন, স্ক্যালোনি জানে কীভাবে দল গড়ে তুলতে হয়। যে পজিশনে যাকে দরকার তাকেই রেখেছে। সামর্থ্যের প্রমাণ সে দিয়েছে, আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকা জিতিয়েছে। সে দলে সৌহার্দের পরিবেশ তৈরি করেছে।
মেসিকে নিয়ে তিনি বলেন, ওর খেলার ধরন বদলে গেছে। আগের মতো সে জ্বলে ওঠে না। আসলে সে নির্ভরযোগ্য সতীর্থ পেয়ে গেছে। সে কারণে মাঠে ওর ভূমিকাও পাল্টে গেছে।