করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু করোনা রোধে দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়। তবে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত শুক্রবার তিনি এ কথা জানান।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। তাদের (সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল) সঙ্গে কথা বলবো। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যদি খুলতে চান খুলবেন, কিংবা যদি ভিন্ন তারিখ নির্ধারণ করেন করবেন, সেটা তাদের বিষয়।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যরা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে তারা মোটামুটি প্রস্তুত। তবে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার পর যে সময় পাওয়া যাবে, তার মধ্যে পুরোপুরি প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে পরিকল্পিত রোডম্যাপ নিয়েছি। ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ শেষে আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো—অক্টোবরে কখন, কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যায়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে অবশ্যই অনলাইন থেকে অফলাইনে যাবো। এতে কোনও দ্বিমত নেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘গত মাসের ২৬ তারিখ আমাদের সঙ্গে এক মিটিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কতজন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছে, কয় ডোজ নিয়েছে, কতজন এখনও নেয়নি—এই তথগুলো সংগ্রহ করতে হবে। সবগুলো বিভাগের তথ্য এখনও এসে পৌঁছায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে মোটামুটি প্রস্তুত আছি। তবে টিকার বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারলেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া যাবে।’
শিক্ষামন্ত্রীর দিকনির্দেশনা পেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু।
শিক্ষামন্ত্রী গত শুক্রবারের বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা দেননি। আমরা আশা করছি তিনি দ্রুতই আমাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো।
তবে রাবির হল প্রাধ্যক্ষরা বলছেন, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর আবাসিক হলগুলো খোলা সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় হলের আসবাপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া হলের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় আছে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য উপযুক্ত করতে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে।
শের-ই বাংলা এ কে ফজলুল হক হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ উজ্জল কুমার আচার্য্য বলেন, আমার হলের শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য বেডগুলো অধিকাংশই কাঠের তৈরি। যেহেতু দীর্ঘদিন হল বন্ধ থাকায় এগুলো অব্যবহৃত ছিল। ফলে এগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে শিক্ষার্থী না আসলে আমরা কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবো না। এছাড়া হলের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।
হল প্রাধ্যক্ষ কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আরিফুর রহমান বলেন, হল খোলার জন্য আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও চলছে। হলগুলোর জন্য আসবাবপত্র চাহিদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরকে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আসলে টেবিল-চেয়ার পাল্টে দিতে দুই-একদিন সময় লাগবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে হল খোলা সম্ভব।
সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ছাড়া এখনই খুলছে না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। ক্যাম্পাসে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করতে প্রশাসনের প্রস্তুতি থাকলেও সরকার থেকে লিখিত নির্দেশনা পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, উপাচার্যদের সঙ্গে মিটিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, টিকা নেওয়া ও করোনা পরিস্থিতির সাপেক্ষে অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। শিক্ষামন্ত্রী অফিসিয়ালি কোনও বিবৃতি দেননি। শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি (শিক্ষামন্ত্রী) বলেছেন, আগামী সভায় উপাচার্যদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি বলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে, খুলে দেবো। আমাদের প্রস্তুতি আছে। সরকার হয়তো এক-দুই সপ্তাহ আগে নির্দেশনা দেবে। সেই সময়ের মধ্যে গুছিয়ে নেবো। তবে আমাদের লিখিত নির্দেশনা লাগবে। শিক্ষামন্ত্রী বলতেই পারেন, কিন্ত সরকার থেকে আমাদের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। যদি এর মধ্যে খোলা সম্ভব না হয়, সেজন্য অনলাইনে পরীক্ষার নীতিমালাও তৈরি করে রেখিছি।
এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নেওয়ার তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) খোলার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি প্রশাসন। সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও টিকা নিশ্চিত করেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার।
‘আমরা চাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে। কিন্তু স্কুল-কলেজের মতো হঠাৎ করেই তো খুলতে পারবো না। আমাদের হল খুলতে হবে, শিক্ষার্থীদের টিকাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। এ পর্যায়গুলো আগে পেরিয়ে আসতে হবে।’