নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ শনিবার সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য: অধিক বিনিয়োগ-অবাধ প্রবাহ।’ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস হলো পৃথিবীর সবার মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতার দিন। ১৯৯২ সালে প্রথমবার এ দিবসটি পালন করা হয়। কিছু দেশে একে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
সম্প্রতি মানসিক স্বাস্থ্য দিবস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়েই মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মক সংকটে পড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও করোনার কারণে সব বয়সী মানুষ মানসিকভাবে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যুক্তরাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ জানিয়েছেন, মহামারির কারণে মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হয়েছে। ইতালি ও স্পেনে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। কানাডায় ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ২০ শতাংশ হারে বেড়েছে মদ্যপান। মহামারির আগের তুলনায় এপ্রিলে ইথিওপিয়ার মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা তিন গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশে এবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সীমিত আকারে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে।
শুক্রবার মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক রোগীকে পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন দেয়া খুবই জরুরি। অন্যান্য রোগের ন্যায় মানসিক রোগেরও আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা রয়েছে। ঝাড়ফুক বা অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি পরিহারে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
এ বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য : অধিক বিনিয়োগ-অবাধ সুযোগ’ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থ হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও একটি স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত থাকবে- এ প্রত্যাশা করি।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি মানসিক রোগের প্রকোপ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বেকারত্ব, ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার পাশাপাশি ব্যবসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় বিশ্বব্যাপী জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একইসঙ্গে মাদকাসক্তি, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, নগরায়নসহ পারিবারিক ও সামাজিক নানা অস্থিরতা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার মানসিক স্বাস্থ্য সেবাসহ সকল ধরনের স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং আপামর জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অবারিত সুযোগ সৃষ্টিতে আরো মনোযোগী হতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিও আহ্বান জানান তিনি ।
তিনি বলেন, সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সারাদেশে স্থাপন করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব সেবা কেন্দ্র থেকে দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে ৩০ পদের ওষুধ পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযথভাবে ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২০’ উদযাপন করা হচ্ছে জেনে আনন্দিত এবং দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য : অধিক বিনিয়োগ-অবাধ সুযোগ’ যথাযথ হয়েছে বলে মনে করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন উন্নত জীবন ও সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে আমাদের সরকার ২০০১ সালে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে, যা ছিল মানসিক স্বাস্থ্য সেবার অগ্রগতিতে একটি মাইলফলক।
দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্র প্রসারিত করাসহ এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২০’ – এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২০’ উদযাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দিনসটি উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।