1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১০ অপরাহ্ন

বেদকাশী ক‌লে‌জি‌য়েট স্কু‌লের অধ্যক্ষের বিরু‌দ্ধে নানা অ‌ভি‌যোগ

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৪

খুলনা জেলা বিশেষ প্রতিনিধি: খুলনার কয়রা উপজেলার বেদকাশী ইউনিয়নের বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলের অধ‌্যক্ষ আব্দুল মাজেদ এর বিরু‌দ্ধে ভুয়া সন‌দে চাকরী, নি‌য়োগ বাণিজ‌্য, ক্ষমতার অপব‌্যবহারসহ বি‌ভিন্ন অ‌ভি‌যোগ পাওয়া গে‌ছে। এ বিষ‌য়ে ২৮ আগষ্ট দূ‌র্ণি‌তি দমন ক‌মিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালায় খুলনার উপ-প‌রিচালক ও কয়রা উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ক‌য়েক‌টি দপ্ত‌রে লি‌খিত অ‌ভি‌যোগ ক‌রে‌ছেন অ‌ভিভাবক ও বিদ‌্যাল‌য়ের সা‌বেক শিক্ষার্থীরা।

অ‌ভি‌যোগপত্র সূ‌ত্রে, গত ১৭ বছরে কলেজ ও স্কুল শাখায় প্রায় ১৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছেন। এতে প্রায় এক কোটি টাকা অবৈধ ঘুষ গ্রহণ ক‌রেন অধ‌্যক্ষ আব্দুল মা‌জেদ। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না ক‌রে খাম‌খেয়ালীভা‌বে কাজ একা‌ধিক কাজ ক‌রে‌ছেন তি‌নি। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে আব্দুল মাজেদের সখ্যতা থাকায় তাকে কেউ কিছু বলার সাহস পেত না। গত ২০২১ সা‌লের ১৯ আগস্ট বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব এ‌্যাসিস্ট্যান্ট পদে আইয়ুব আলী নামক একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, শিক্ষাজীবনের এইচএসসি পরীক্ষায় কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়সহ বিজ্ঞানবিভাগ থাকতে হবে অথবা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে কমপক্ষে ৩ বছরের ডিপ্লোমা থাকতে হবে। ত‌বে নিয়োগপ্রাপ্ত আইয়ুব আলী এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হলেও তার কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি সাবজেক্ট ছিল না। তার ৩ বছরের ডিপ্লোমাও নেই। নিয়োগপ্রাপ্ত উক্ত ব্যক্তি কম্পিউটারের ডাটাবেজ প্রোগ্রামিং এর ওপর ৩৬০ ঘন্টার একটা ট্রেনিং এ অংশ নিয়েছে বলে একটা সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। এই সার্টিফিকেটও শতভাগ ভুয়া ব‌লে অ‌ভি‌যোগ তা‌দের।এছাড়া আইয়ুব আলী পরবর্তীতে অধ‌্যা‌ক্ষের দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী হয়ে ওঠেন। তিনি কম্পিউটার ল্যাব এ‌্যা‌সিসট‌্যান্ট হয়েও খবরদারি করতে শুরু করেন শিক্ষকদের ওপর। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রভাব খাটিয়ে নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান শাখায় ক্লাস নেয়া শুরু করেন। পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার কাছে প্রাইভেট পড়া শিক্ষার্থীদের ভাল রেজাল্ট করানোর সাথে জড়িত হন এবং এই কাজের আর্থিক সুবিধাও আব্দুল মাজেদ নিতেন। এছাড়া ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার একাধিক অভিযোগ আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে পাওয়া যায় ব‌লে। এবিষয়ে আব্দুল মাজেদ সাহেবের কাছে শিক্ষকরা বার বার অভিযোগ করলেও তিনি আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো শিক্ষকদের গালমন্দ করতেন।

প্রতিষ্ঠান‌টি‌তে মোস্তাফিজুর রহমান নামক একজন লেকচারার নিয়োগ দেয়া হ‌য়ে‌ছে যিনি এসএসসি পরীক্ষায় বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে ফেল করেছিলেন। পরে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বারবার পরীক্ষা দিয়ে অবশেষে ২০০৫ সালে এসএসসি পাশ করেন। তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় জালিয়াতি করে (বডি চেঞ্জের মাধ্যমে) অর্জন করেছেন বলে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াতেন। শিক্ষকতার মত মহান পেশায় তার মিনিমাম যোগ্যতা নেই বরং তিনি ছিলেন কোরিয়ান একজন প্রবাসী শ্রমিক। কলেজ এমপিওভূক্ত হওয়ার ঘোষণা আসার পরই তিনি কোরিয়া থেকে ফিরে এসে আব্দুল মাজেদ সাহেবকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে কলেজে যোগদান করেন এবং কলেজের অদূরে রঞ্জন মার্কেটে তিনি একটা রুম ভাড়া নেন। যা মোস্তাফিজ স্যারের ডেরা নামে পরিচিত। সেখানে ছাত্রদের সাথে মাদকের আখড়া বসানো, ক্যারাম খেলা, ধুমপান করাসহ নানা অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত থা‌কেন। এছাড়া অধ‌্যক্ষের মদদে হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করেন। ঠিকমত ক্লাস নেন না। রাজনৈতিক প্রভাবে এসব কর্মকাণ্ড সে অকপটে চালিয়ে যায়। এছাড়া আব্দুল মাজেদ বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত একমাত্র খেলার মাঠটি ২০১৯ সাল মোজাহার এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কয়েকবছরের জন্য লিজ দেন। ফলে ছাত্র ছাত্রীরা খেলাধুলার মত আবশ্যক একটা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। এছাড়া আব্দুল মাজেদ মাঠ ভাড়ার সব টাকা বিদ্যালয়ে জমা দেন‌নি।
অধ‌্যক্ষ আব্দুল মাজেদ সাহেবের নিজের শিক্ষাসনদগুলোও প্রাথ‌মিক তদ‌ন্তে জাল পে‌য়ে‌ছেন ব‌লে অ‌ভি‌যোগ প‌ত্রে উল্লেখ করা হয়। যা অধিকতর তদন্তের দাবি অ‌ভি‌যোগকারী‌দের। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সার্টিফিকেট শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ হিসেবে দেখিয়ে চাকরী কর‌ছেন সেটা ওয়েবসাইটে পান‌নি তারা। এছাড়া তিনি অভিজ্ঞতার সনদ জালিয়াতি করে প্রধান শিক্ষক হয়েছি‌লেন বলে উল্লেখ করা হয়। একারণে আবু ইছা গাজী নামের একজন অভিভাবক সদস্য আব্দুল মাজেদ সাহেবের নামে মামলা ক‌রেন। ত‌বে পরবর্তীতে তি‌নি মামলা তুলে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, তিনি উদ্ধত্য দেখিয়ে বলতেন আমার প্রতিষ্ঠান আমার ইচ্ছায় চলবে। নানা অ‌নিয়ম কর‌লেও প্রতিবাদ কর‌তে পা‌রিনা। প্রতিবাদ কর‌লেই হয়রা‌ণির শিকার হ‌তে হয়।

উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আব্দুল মাজেদ সাহেবের ব্যাংক হিসাব তলব ও অন্যান্য তদন্ত করলে সকল প্রমাণ বেরিয়ে আসবে বলে এলাকাবাসী ম‌নে ক‌রেন।নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে যেসব অপকর্ম অতীতে হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের সবার অপসারণ ও আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করে দ্রুত শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দা‌বি প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অভিভাবকদের।

এ বিষ‌য়ে বেদকাশী ক‌লে‌জিয়েট স্কু‌লের অধ‌্যক্ষ আব্দুল মা‌জেদ ব‌লেন, আমা‌দের বিরু‌দ্ধে আনীত সকল অ‌ভি‌যোগ মিথ‌্যা, বা‌নোয়াট ও উদ্যেশ‌্য প্রণো‌দিত।

এ বিষ‌য়ে কয়রা উপ‌জে‌লা নি‌র্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস ব‌লেন, অ‌ভি‌যোগ পে‌য়ে‌ছি। তদন্ত সা‌পে‌ক্ষ ব‌্যবস্থা নেয়া হ‌বে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি