মুহাম্মদ ওয়াহিদুন নবী বিপ্লব: পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ক্রোককৃত সম্পত্তিগুলোর রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদের ক্রোক করা সম্পত্তিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ জন্য রিসিভার নিয়োগের আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তা বলা যাচ্ছে না।
এই রিসিভারের কাজী কী হবে, জানতে চাইলে আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আরও বলেন, যাকে রিসিভার নিয়োগ দেওয়া হবে, তিনি মূলত ক্রোক করা সম্পত্তিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। ওই সম্পত্তির আয়-ব্যয়ের হিসাব একটা নির্দিষ্ট সময়ে আদালতকে জানাবেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে ওই সম্পত্তি বাজেয়াপ্তও করা হতে পারে। তখনও রিসিভার (তত্ত্বাবধায়ক) আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবেন। এরই মধ্যে তার বেশকিছু সম্পদের ওপর ‘ক্রোক’ ও ‘ফ্রিজের’ নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এ তালিকায় রয়েছে বেনজীর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৬২১ বিঘা জমি।
এছাড়া, গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটের সার্বিক অবস্থা জানাতে আজ নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানার পর এসব ফ্ল্যাট দেখভালের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেবেন আদালত।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক জাতীয় দৈনিক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই বেশ আলোচনায় পুলিশের সাবেক এই আইজিপি।
জাতীয় ওই দৈনিকে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে তার নানা অর্থ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছের এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে ২ লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় ১ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।
বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকে চিঠি দেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পরে অনুসন্ধান শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধানকালে দুদক বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।