কিলিয়ান এমবাপ্পে ২: ৩ করিম বেনজেমা।
পিএসজি ২: ৩ রিয়াল মাদ্রিদ।
দুই লেগ জুড়ে এমবাপ্পে ঝলক দেখিয়েছেন। ১৮০ মিনিট জুড়ে মেসি-নেইমারের জাদুর অপেক্ষায় থেকেছেন পিএসজি-ভক্তরা। অপেক্ষা ফুরায়নি। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে আর ফুরোবে না।
করিম বেনজেমার ১৮ মিনিটের ঝলকে শেষ ষোলোতেই যে বিদায় হয়ে গেল মেসি-এমবাপ্পেদের! ৬১ থেকে ৭৮ – এই ১৮ মিনিটে বেনজেমার অবিশ্বাস্য হ্যাটট্রিকে দুই লেগ মিলিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ৩-২ গোলে হারিয়ে দিয়েছে পিএসজিকে।
প্যারিসে প্রথম লেগে শেষ মুহূর্তে এমবাপ্পের গোলে ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল পিএসজি, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আজ ৩৯ মিনিটে আবার এমবাপ্পে ঝলক। দারুণ পাল্টা আক্রমণে পিএসজিকে আবারও গোল এনে দিলেন ফরাসি সেনসেশন। পিএসজি ২-০ রিয়াল, ফরাসিদের শেষ আটে যাওয়াই তখন ভবিতব্য বলে মনে হচ্ছিল।
কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগের যে এমন ম্যাড়মেড়ে গল্প পছন্দ হলো না। করিম বেনজেমারও বুঝি পছন্দ হলো না নিজেরই ফ্রান্স-সতীর্থকে প্রতিপক্ষের জার্সিতে এমন আলো ছড়াতে দেখে। এমবাপ্পে আগামী মৌসুমে রিয়ালেই যাবেন ধরে নিয়ে ম্যাচের শুরুতে তাঁকে করতালিতে অভিনন্দন জানানো বার্নাব্যুর সমর্থকদেরও বুঝি তখন এমবাপ্পেকে একটু পর পর লাগছিল। আপন হলেও সে তো হবেন জুলাইয়ে বা তার পর!
আপাতত আপন যিনি, সেই বেনজেমাই যে রিয়ালের জন্য অবিশ্বাসমাখানো আনন্দের গল্প লিখে রেখেছিলেন, তখন কজনই বা আর অনুমান করতে পেরেছিলেন!
দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পের একটা গোল বাতিল হলো ৫৪ মিনিটে, এরপরই বুঝি মাদ্রিদের মনে পড়ল, এটা চ্যাম্পিয়নস লিগ। এখানে রিয়াল মাদ্রিদ অনন্য! রিয়ালের মাঠে এসে কেউ খবরদারি করবে, সেটা তাদের সহ্য হবে কেন!
প্রথম গোলটি অবশ্য পিএসজি গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মার ভুলে। নিজের পায়ে বল ছিল, কিন্তু সেটি সতীর্থকে দিতে দেরি করে ফেলেন দোন্নারুম্মা। বেনজেমা বল কেড়ে নিতে চাপ দিচ্ছিলেন, চাপের মুখে দোন্নারুম্মা অসহায়ভাবে বলটাকে কোনোরকমে ঠেলে দিলেন। বক্সেই ওঁৎ পেতে থাকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র সেটি ধরে কাট ব্যাক করলেন, বেনজেমা বল জড়িয়ে দিলেন জালে।
ম্যাচে সমতা রিয়াল, কিন্তু দুই লেগ মিলিয়ে তখনো তো পিছিয়ে। তবে বার্নাব্যুতে তখন কিছু একটা ভর করেছে! মাদ্রিদের ভক্তরা উল্লাস করছেন, প্রথম গোলের পর নিজেদের নতুন করে ফিরে পাওয়া মাদ্রিদের খেলোয়াড়েরাও দারুণ প্রেসিংয়ে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন পিএসজিকে। আর ফরাসি ক্লাবেরও যেন কী হলো! ক্লাবটার রক্ষণ যে বল পায়ে অনভ্যস্ত, প্রতিপক্ষের চাপের মুখে বল নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে না, সে মৌসুমের শুরু থেকেই পিএসজির দুশ্চিন্তা ছিল। আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিল!
বিজ্ঞাপন
৭৬ মিনিটে বেনজেমার দ্বিতীয় গোল, দুই লেগ মিলিয়ে সমতায় রিয়াল। গোলটাতে মদরিচের দারুণ অবদান! নিজেদের অর্ধ থেকে দারুণভাবে বল বের করে নিয়ে এলেন, এরপর দারুণ থ্রু বাড়িয়েছিলেন ভিনিসিয়ুসকে। ব্রাজিলিয়ান তরুণ গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করলেও বল হারাননি। সামনে পিএসজির ডিফেন্ডার চলে এসেছে দেখে আবার বক্সের বাইরে মদরিচকেই পাস দিলেন। সেখান থেকে ক্রোয়েশিয়ান প্লেমেকারের দারুণ থ্রু বক্সে খুঁজে নেয় বেনজেমাকে। ফরাসি স্ট্রাইকারের গোল!
ওই গোলের উল্লাসই শেষ হয়নি, এর মধ্যে আবার গোল বেনজেমার! কিক-অফের পরই বল হারিয়ে ফেলে পিএসজির মাঝমাঠ, আক্রমণে রিয়াল। ভিনিসিয়ুসের দিকে যেতে থাকা বল পা বাড়িয়ে ঠেকিয়ে দেন পিএসজি অধিনায়ক মারকিনিওস। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল বক্সের প্রান্তে যায় বেনজেমারই কাছে। রিয়াল অধিনায়কের প্রথম স্পর্শের বুদ্ধিদীপ্ত শটে বল দোন্নারুম্মাকে ফাঁকি দিয়ে জালে।
বার্নাব্যু তখন উচ্ছ্বসিত। ‘আমরাই ইউরোপের রাজা’ গান ধরেছে রিয়াল সমর্থক। পিএসজির আর বুঝি কিছু করার সাধ্য ছিল না।
রিয়াল মাদ্রিদ আরেকবার বুঝিয়ে দিল, এটা চ্যাম্পিয়নস লিগ আর এখানে রিয়াল মাদ্রিদ নামটার ভারই অন্যরকম।
পিএসজি আরেকবার বুঝল, এটা চ্যাম্পিয়নস লিগ আর এখানে কূলীনদের সারিতে উঠতে শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করে মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেদের দিয়ে দল সাজালেই হয় না। বাড়তি কিছু লাগে।
যেটা রিয়াল মাদ্রিদের আছে!