নতুন মৌসুমের শুরুটা ভুলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে কাটাচ্ছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রথম চার ম্যাচে তারা মাত্র ২টিতে জয় পেয়েছিল। যা তাদেরকে লিগ টেবিলে ১০-এর বাইরে নিয়ে গেছে। এবার ঘরের মাঠে ব্রাইটনের বিপক্ষেও ৩-১ গোলে হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে ওল্ড ট্রাফোর্ড শিবিরকে। অন্যদিকে, আলাদা ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত কামব্যাকে জয়ের গল্প লিখেছে ম্যানচেস্টারের আরেক ক্লাব সিটি ও লিভারপুল।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যাচের শুরু থেকে দারুণ খেলতে থাকে এরিক টেন হাগের ইউনাইটেড। শুরু থেকেই আক্রমণে ব্যস্ত রাখে ব্রাইটনের রক্ষণকে। তবে স্রোতের বিপরীতে প্রথম গোলটা পেয়ে যায় ব্রাইটন। ম্যাচের ২০ মিনিটে তারা এগিয়ে যায়। গোল করেন ইংলিশ ফুটবলার ড্যানি ওয়েলব্যাক। প্রিমিয়ার লিগে এটি ম্যানইউ’র বিপক্ষে ওয়েলব্যাকের চতুর্থ গোল। রেড ডেভিলদের হয়ে খেলেছেন এমন ফুটবলারদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
এরপর ম্যাচের ৪০ মিনিটে মার্কাস রাশফোর্ডের অ্যাসিস্টে ইউনাইটেডের হয়ে বল জালে জড়িয়েছিলেন রাসমুস হালুন্দ। তবে গোলটি ভিএআরে বাতিল করা হয়। ফলে প্রথমার্ধে তাদের আর সমতা টানা হয়নি।
বিরতির পর ৫৩ মিনিটে রক্ষণের ভুলে ফের গোল হজম করে ইউনাইটেড। ব্রাইটনের হয়ে গোলটি করেন প্যাসকাল গ্রোস। এতে তার দল দ্বিগুণ লিড পেয়ে যায়। ৭১ মিনিটে আরও একটি গোল হজম করে রেড ডেভিলসরা। ব্রাইটনের হয়ে গোল করেন ব্রাজিলের জোয়াও পেদ্রো। ফলে ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচ জয় নিশ্চিত করেন ব্রাইটন। ম্যাচের শেষদিকে সান্ত্বনার একটি গোল পেয়ে যায় ইউনাইটেডও। গোলটি করেন তরুণ মিডফিল্ডার হ্যানিবাল মেজব্রির। এই ম্যাচে হারের ফলে ৫ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার ১২ নম্বরে থাকল ইউনাইটেড।
ম্যান-সিটির বড় জয়
একইদিন রাতে ওয়েস্ট হামের মাঠে তাদের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচে নিজেদের রক্ষণের ভুলে প্রথমার্ধেই পিছিয়ে পড়ে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। পরবর্তীতে অবশ্য তারা একে একে তিন গোল করে। ফলে ৩-১ ব্যবধানের বড় জয় নিয়ে ম্যানসিটি মাঠ ছাড়ে। সিটির হয়ে একটি করে গোল করেছেন আর্লিং হালান্ড, বানার্দো সিলভা ও জেরেমি ডোকু।
পিঠের অস্ত্রোপচার শেষে দুই ম্যাচ পর এদিন ডাগআউটে ফেরেন গার্দিওলা। তার উপস্থিতিতে প্রথমার্ধে গোল-মিসের মহড়া দেখিয়েছেন হালান্ডরা। এরপর তাদের রক্ষণের ভুল কাজে লাগিয়ে প্রথম গোলটা পেয়ে যায় ওয়েস্ট হাম। ম্যাচের ৩৬ তম মিনিটে হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন জেমস ওয়ার্ড প্রস। এরপর সিটিও ম্যাচে সমতা টানতে পারত। হালান্ড ম্যাচের ৪২ মিনিটে সহজ সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেন। জেরেমি ডোকুর বাড়ানো বল ফাঁকা পোস্টের সামনে পেয়েও জালে জড়াতে পারেননি নরওয়েজিয়ান ফরোয়ার্ড।
পিছিয়ে পড়া সিটি বিরতি থেকে ফিরেই ৪৬ মিনিটে খেলায় ফেরে। স্কোরশিটে নাম লেখান আন্ডারলেখট থেকে ৭৬৫ কোটি টাকায় কেনা ডোকু। আর্জেন্টাইন তারকা জুলিয়ান আলভারেজের বাড়ানো বল নিয়ে বক্সে ঢুকে বেলজিয়ান তারকা বাঁকানো শটে বল জালে জড়ান। এরপর সিটির দ্বিতীয় গোলেও অবদান ছিল আলভারেজের। ডি–বক্সের বাইরে থেকে তার ভাসানো বল পেয়ে সফল লক্ষ্যভেদ করেন পর্তুগিজ তারকা বার্নাদো সিলভা। এতে লিড পেয়ে যায় সিটি।
আগেই কয়েকটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার পর ম্যাচের ৮৬ মিনিটে গোল করে জয় নিশ্চিত করেন হালান্ড। ৩-১ ব্যবধানে জয় নিয়ে সিটি মাঠ ছাড়ে। টানা পাঁচ ম্যাচের জয়ে এখন পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
কামব্যাকের গল্প লিভারপুলের
উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডার্সের বিপক্ষে দুই তারকাকে ছাড়াই নামতে হয়েছে লিভারপুলকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ভার্জিল ফন ডাইক ও চোটের কারণে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার–আরনল্ডকে বাইরে রেখে একাদশ সাজাতে হয়েছিল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে। এরপর মাঠে নামার মাত্র ৭ মিনিটেই তারা পিছিয়ে পড়ে।
উলভারহ্যাম্পটনের শুরুটা দারুণভাবে করেছিলেন হোয়াং হি–চান। পেদ্রো নেতো ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়ের পর হোয়াংকে বল বাড়ালে তিনি বল জালে জড়িয়ে দেন। বল দখলে এগিয়ে থাকলেও গোলের লক্ষ্যে শটে পিছিয়ে ছিল লিভারপুল। প্রথমার্ধে তাদের জালে উলভস ৮টি শট নিয়েছে। লিভারপুল উলভসের জালে নিতে পেরেছে ৫টি শট। তার মধ্যে দুটি কেবল লক্ষ্যে ছিল। বিরতির আগে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে মাঠ ছাড়ে লিভারপুল।
এরপর ক্লপের শিষ্যরা দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে। একের পর এক আক্রমণ করে যায় তারা উলভসের রক্ষণে। খেলার স্রোতের বিপরীতে একটি পাল্টা আক্রমণ থেকে প্রায় গোল পেয়ে যাচ্ছিল উলভস। সেই প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে যান সালাহ। মিসরীয় তারকা অনেকটা এগিয়ে বল দেন কোডি গাকপোকে। তার নেওয়া দুর্দান্ত শটে ৫৫ মিনিটে সমতায় ফেরে লিভারপুল।
এরপর ৮৫ মিনিটে লিভারপুলের দ্বিতীয় গোলটি করেন অ্যান্ডি রবার্টসন। গোলকিক থেকে বল পেয়ে তিনি সালাহর সঙ্গে ওয়ান–টু করে সামনে এগিয়ে যান। একপর্যায়ে সালাহ বল নিয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে কাটব্যাক করে দেন রবার্টসনকে। তিনি ঠাণ্ডা মাথায় বল জালে পাঠান। যোগ করা সময়ের শুরুতে সালাহ’র অ্যাসিস্টে তৃতীয় গোলটি করেন হার্ভি এলিয়ট। এই জয়ের পর ৫ ম্যাচে লিভারপুলের পয়েন্ট ১৩।