টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে সরাসরি সুযোগ পাওয়া দলগুলোর ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৬ রানে হেরেছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ভারতের ১৮৬ রানের জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৮০ রানে অলআউট হয়ে যায় অজিরা।
ব্রিসবেনের গ্যাবায় ভারতের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের পরও অবশ্য অজি ব্যাটারদের দৃঢ়তায় হার চোখ রাঙাচ্ছিলো ভারতকে। তবে শেষ ওভারে মোহাম্মদ সামির দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৬ রানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রোহিত শর্মার দল।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই অজি বোলারদের অপর চড়াও হন ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুল। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারেই বিনা উইকেটে ভারত তুলে ফেলে ৬৯ রান। যেখানে নিজের ফিফটি তুলে নিয়ে রাহুল একাই করেন ২৭ বলে ৫০ রান। আরেক ওপেনার রোহিত শর্মা ততক্ষণে খেলেছেন মাত্র ৯ বল।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে দলীয় ৭৯ রানে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন রাহুল। ৬ চার আর ৩ ছক্কায় ফেরার আগে করেন ৩৩ বলে ৫৭ রান।
পরের ওভারেই অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে ফিরে যান রোহিত শর্মা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে বিরাট কোহলি আর সূর্যকুমার যাদব মিলেও ভালোই শুরু করেছিলেন। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি কোহলি। ১৩ বলে ১৯ রান করে মিচেল স্টার্কের বলে আউত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। কেন রিচার্ডসনের পরের ওভারে ফিরে যান হার্দিক পান্ডিয়াও। উড়ন্ত শুরুর পরও দ্রুত উইকেট হারিয়ে রান তোলায় কিছুটা ধীর হয়ে যায় ভারত।
দীনেশ কার্তিক এসে শুরুটা করেছিলেন বেশ ভালো। তবে ১ চার আর ১ ছক্কায় ১৪ বলে ১৯ রান করে ফেরেন তিনিও। ১৫৭ রানে ৫ম উইকেট হারায় ভারত।
ক্রিজের অপর প্রান্তে তখন ঝড় তুলেছেন সূর্যকুমার। বিধ্বংসী এই ব্যাটারের ঝড়ো ফিফটিতে বড় সংগ্রহ পায় ভারত। ৩৩ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় ৫০ রান করে ইনিংসের শেষ ওভারে রিচার্ডসনের বলে আউট হন সূর্যকুমার।
নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান তোলে রোহিত শর্মার দল। অজিদের হয়ে ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেনে কেন রিচার্ডসন।
১৮৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে অস্ট্রেলিয়া। নিয়মিত ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের বদলে এদিন অ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে অজিদের ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন মিচেল মার্শ। এই দুজনের উদ্বোধনী জুটিতেই ৬৪ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মিচেল মার্শ বিদায় নিলেও স্টিভেন স্মিথকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ।
স্মিথ অবশ্য বেশি সময় সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ককে। মাত্র ১১ রান করেই যুজবেন্দ্র চাহালের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। চার নম্বরে নেমে ঝড় তুলেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। অধিনায়কের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন ৪৮ রানের জুটি। তবে হঠাৎি খেই হারান তিনি। ১৬ বলে ২৩ রান করেই ভুবনেশ্বর কুমারের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। ১৪৫ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ক্যাঙ্গারুরা। অজিদের জয়ের জন্য তখন প্রয়োজন ২৭ বলে ৪২ রান। সেটা অসম্ভব ছিলো না কোনোভাবেই।
সেখান থেকে হঠাৎই তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। অজিদের হয়ে এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন ফিঞ্চ। কিন্তু অপর প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। শেষ ২৪ বলেই অজিরা হারায় বাকি ৭ উইকেট। যার ভেতর ইনিংসের শেষ চার বলে টানা হারায় শেষ চার উইকেট।
ফিঞ্চ চেষ্টা চালিয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত। তবে একা আর পারেননি। ৫৪ বলে ৭ চার আর ৩ ছক্কায় ৭৯ রান করে হার্শাল প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন অজি অধিনায়ক। দলের জয়ের জন্য সে সময় প্রয়োজন আর ১১ বলে ১৬ রান, হাতে পাঁচ উইকেট। জয়টা তখনো নিজেদের সীমার ভেতরেই ছিল।
শেষ ওভারে অজিদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিলো ৬ বলে ১১ রান। তবে মোহাম্মদ শামির বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে শেষ ওভারে মাত্র ৪ রান নিতে পারে অস্ট্রেলিয়া। শেষ চার বলে টানা ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮০ রানেই অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিকরা। মোহাম্মদ শামিকে দিয়ে করানো এই এক ওভারের কল্যাণেই ৬ রানের জয় নিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্ব শুরু করলো ভারত। আগামী ১৯ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয়ন প্রস্তুতি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে ভারত।
শেষ ওভারের তৃতীয়, পঞ্চম আর ষষ্ঠ বলে উইকেট নিয়ে ওভার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন শামি। মাঝে চতুর্থ বলে অ্যাস্টন অ্যাগার হয়েছেন রান আউট। শামির করা ওই এক ওভারেই ৩ উইকেটের সঙ্গে ভারতের হয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার। আর্শদিপ শিং, হার্শাল প্যাটেল আর যুজবেন্দ্র চাহাল নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।