চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে শনিবার মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিন্দ্বন্দি ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৯২ সালের পর ওয়ানডে বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে কখনওই জিততে পারেনি পাকিস্তান। যে কোনভাবে এবার হারের বৃত্ত ভাঙ্গতে মরিয়া পাকরা। অন্যদিকে বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর ভারত।
এক লাখ ৩২ হাজার ধারণক্ষম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। ব্লকবাস্টার এ ম্যাচকে ঘিরে স্টেডিয়াম এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে রেখেছে ১১ হাজার নিরাপত্তারক্ষী।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে শুধুমাত্র আইসিসি তথা ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টেই মুখোমুখি হয় দল দুটি। এই দুই দলের ম্যাচ নিয়ে সব সময়ই সারাবিশ্বের লাখ-লাখ ভক্তদের মধ্যে বিরাজ করে উত্তেজনা। সেই সাথে ব্রডকাস্টার এবং স্পনসরদের মধ্যে বাড়তি প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
দুই চিরপ্রতিন্দ্বন্দির ম্যাচ দেখতে মরিয়া সমর্থকদের চাপে ইতোমধ্যেই আহমেদাবাদে সব হোটেলের রুম শেষ হয়ে গেছে। এমনকি হোটেল ভাড়া ১০ গুণ বেড়ে যাবার কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে বাধ্য হয়ে শহরের হাসপাতালগুলোতে ওয়ার্ড নিয়ে রাত পার করছেন ভক্ত সমর্থকরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নামে নাম করা আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে দুই দলই মাঠে নামছে টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে।
প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পর আগের ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে বিশ্বকাপে রেকর্ড ৩৪৫ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে পাকিস্তান। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান অপরাজিত ১৩১ এবং আব্দুল্লাহ শফিক ১১৩ রান করেন।
হায়দারাবাদে ম্যাচ সেরা হওয়া রিজওয়ান বলেন, ‘আমরা এখন জয়ের ধারায় আছি। তারাও একটা পরিকল্পনা নিয়েই খেলতে নামবে, আমরাও পরিকল্পনা নিয়ে খেলবো।’
বাঁ-হাতি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের শক্তিশালী পেস বোলিং অ্যাটাকের বিপক্ষে ৩৪৪ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে শ্রীলংকা।
আহমেদাবাদের হিন্দু ধর্মাম্বলীদের প্রধান উৎসব থাকায় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি প্রথমে নির্ধারিত তারিখ থেকে এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য প্রতি ১১ জন দর্শকের জন্য থাকছে একজন পুলিশ সদস্য।
ম্যাচের সব টিকিট অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী আট গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়েছে ম্যাচ টিকিট।
আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপ শুরু করে ভারত। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটের দারুণ জয় দিয়ে এবারের টুর্নামেন্ট শুরু করে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া।
গত বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বিশ্বকাপের ইতিহাসে রেকর্ড সপ্তম সেঞ্চুরি করে ভারতের ৮ উইকেটের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
কিন্তু টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ম্যাচ নিয়ে ঠান্ডা মেজাজে আছেন রোহিত। দিল্লিতে ১৩১ রানের ইনিংস খেলার রোহিত বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা বাইরের বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না এবং আমরা যেসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেগুলোতে মনোযোগ দিয়ে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মেলে ধরতে এবং ভালো খেলতে হবে। উইকেট কেমন হবে, আমরা কেমন একাদশ নিয়ে খেলতে পারি, সেটি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বাইরে কি ঘটবে, আমরা সেগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন হবো না।’
ব্যাট হাতে এখনও জ্বলে উঠতে পারেননি আইসিসি র্যাংকিংয়ে ব্যাটারদের তালিকায় শীর্ষে থাকা পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৫ এবং ১০ রান করেন তিনি।
১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বকাপে সাত দেখায় ভারতের বিপক্ষে কখনওই জয় পায়নি পাকিস্তান। বিশ্বকাপে ভারতের কাছে পাকিস্তানের সর্বশেষ হারটি ছিলো ২০১৯ সালে। ঐ আসরে ম্যানচেষ্টারে বৃষ্টি-বিঘ্নিত ম্যাচে ৮৯ রানে হেরেছিলো পাকিস্তান।
দুই দলের মোকাবেলায় ওয়ানডে ক্রিকেটে জয়ের দিক দিয়ে পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে আছে ভারত। এখন পর্যন্ত ১৩৪ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এরমধ্যে পাকিস্তানের জয় ৭৩টিতে, ভারতের জয় ৫৬টিতে। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত।
গেল মাসে এশিয়া কাপ সুপার ফোরে পাকিস্তানকে ২২৮ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিলো ভারত। শেষ পর্যন্ত আসরের শিরোপাও জিতেছে টিম ইন্ডিয়া।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের জয়ে বড় অবদান রাখেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। কোহলি ৮৫ ও রাহুল অপরাজিত ৯৭ রান করেন। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে অপরাজিত ৫৫ রান করেন কোহলি।
শনিবারের ম্যাচের আগে ভারতীয় বোলারদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে আফগানিস্তনের বিপক্ষে পেসার জসপ্রিত বুমরাহর ৩৯ রানে ৪ উইকেট।
ভিসা পেতে বিলম্ব হবার কারণে পাকিস্তানে প্রথম দুই ম্যাচ মিস করেন পাকিস্তানের সাংবাদিকরা। তবে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ম্যাচকে সামনে রেখে ভারতে পৌঁছেছেন তারা।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, ঈশান কিশান, সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, শারদুল ঠাকুর, জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি ও মোহাম্মদ সিরাজ।
পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সৌদ শাকিল, ইফতিখার আহমেদ, আঘা সালমান, মোহাম্মদ নাওয়াজ, উসামা মির, হারিস রউফ, হাসান আলি, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।