কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। জীবন বাজি রেখে আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করেছে, পরম আত্মত্যাগ স্বীকার করেছে। আমরা উভয় দেশই সব দিক থেকেই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। যদিও অর্থনৈতিক এবং ভৌগোলিক দিক থেকে ভারত একটু বড় দেশ। তারপরও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন ও সাম্প্রদায়িকতা-ধর্মান্ধতা রুখতে দুইদেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কে আরও সুদৃঢ় করতে হবে।
শুক্রবার (৯ জুন) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় কলকাতার পিয়ারলেস ইন হোটেলে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালিদের যোগসূত্র বাড়ানোর সংগঠন ‘বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন,অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শ নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এসব আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় নি। ধর্মনিরপেক্ষতা- অসাম্প্রদায়িকতার সাথে কোন আপোষ করে নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, সবসময়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে, আন্দোলন- সংগ্রাম করেছে। কিন্তু দেশে বিএনপিসহ কিছু দল রয়েছে, যারা ক্ষমতায় আসার জন্য সবসময়ই ধর্মকে ব্যবহার করে।
বাঙালি বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হতে পারে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ভারত- বাংলাদেশের বাঙালিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী একসাথে থেকেছে। এখন বাস্তবতার কারণে দুটি দেশ, ভৌগোলিক অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় পরিচয় ভিন্ন হলেও; বাঙালিদের চিন্তা-চেতনা, খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচরণ, ভাষা- সংস্কৃতিসহ প্রায় সবকিছুই এক ও অভিন্ন। সেজন্য, আমরা বাঙালিরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করলে বিশ্বে বাঙালিরা অন্যতম শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে পরিণত হতে পারে।
সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে। সেই নির্বাচনে আমরা জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ২০১৫ সালে আমরা দানা জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। সামাজিক ইনডেক্সগুলিতেও আমরা খুব ভালো ফল করেছি। অনেকক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে আছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সভাপতি এবং কলকাতা ও মুম্বাই হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়। এসময় বাংলাদেশের অতিথিবৃন্দের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ব্যারিস্টার আমীর-উল- ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বদেশ রায়, কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য পবিত্র সরকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর।
কলকাতা থেকে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রখ্যাত আইনজীবী বিমল চ্যাটার্জী, আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। শিক্ষাজগতের থেকে ছিলেন ড. পবিত্র সরকার, অধ্যাপক শোভনলাল দত্তগুপ্ত, দিল্লির শিব নাদার ইনস্টিট্যুট অব এমিনেন্স-এর অধ্যাপক আশিস ভট্টাচার্য, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ উপাচার্য অধ্যাপক অশোক রঞ্জন ঠাকুর, নেতাজী সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপিকা মণিমালা দাস, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অধ্যাপক পার্থ ঘোষ প্রমুখ।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর ওপর তথ্যচিত্রের উন্মোচন-
একই অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবদুল গাফফার চৌধুরীর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রের উন্মোচন করেন।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল গফফর চৌধুরী প্রয়াত হন গত বছর ১৯ মে। তিনি বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড-এর সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম উপদেষ্টাও ছিলেন। তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতেই বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড-এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসাবে নির্মিত হয়েছে এই তথ্যচিত্রটি।
বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড-এর সারা বছর ব্যাপী কর্মসূচির অন্যতমটি হল শিক্ষা‚ স্বাস্থ্য‚ আর্থ-সামাজিক‚ বাণিজ্য এবং সংস্কৃতি বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং মত বিনিময়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দু’পারের বাঙালির মধ্যে পারস্পরিক কাজ করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা সম্ভব বলে মনে করে সংগঠনটি। দুই বাংলার মধ্যে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এই সেতুবন্ধন মজবুত করতে পারে বলে মনে করে বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড। বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাঙালির নিজস্ব মঞ্চ। সারা বিশ্বের বাঙালিকে ইতিহাস, কৃষ্টি এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একসূত্রে গাঁথার কাজ করে চলেছে এই সংগঠনটি।