যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল শুক্রবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণায় বিরোধীদের কথাও বলা হয়েছে। এবার তারা (বিএনপি) জ্বালাও-পোড়াও করতে পারবে না। এতে জনগণের জীবন বাঁচবে।
শেখ হাসিনা বলেন, কে নিষেধাজ্ঞা দিলো আর কে দিলো না, তাতে কিছু যায় আসে না। আমার ছেলেও এখানে আছে। সে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, সম্পত্তি আছে, বাড়ি-ঘর আছে। যদি বাতিল করে, করবে। তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের বাংলাদেশতো আছেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্ক থাকতে হবে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা দেশের বাইরে থেকে যেন না হয়। এটি হলে বাংলাদেশের জনগণই তাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেবে।
তিনি বলেন, যারা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাদের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে। ভিসানীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে কিছু বলার নেই। কারও শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। জনগণের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় এসেছি এবং আছি।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা কি ২০০১ সালের অবৈধ নির্বাচন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, হ্যাঁ-না ভোটের কথা ভুলে গেছে? নির্বাচন নিয়ে এই সচেতনতা তখন তাদের কোথায় ছিল?
তিনি বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার আওয়ামী লীগই করেছে। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এটি আমারই স্লোগান।
এর আগে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সংকট মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ জন্য অবশ্যই বিভাজন, সংকীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে।
তিনি বলেন, করোনা, জলবায়ু সংকটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা।
তিনি আরও বলেন, এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো জরুরিভাবে প্রয়োজন যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তাছাড়া, জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলির ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, সমস্ত ঋণ ব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি।