1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

ভূমিকম্প মোকাবিলায় তিন ধাপে ৫০ বছরের পরিকল্পনা

রিপোর্টার
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, জাপানের জাইকার সহায়তায় দেশে ভূমিকম্পের ক্ষতি মোকাবিলায় তিন ধাপে ৫০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

প্রথম ধাপে পুরান ঢাকার মতো অবকাঠামো ভেঙে নতুন করে নির্মাণ উপকারভোগীদের মাঝে বরাদ্দ, দ্বিতীয় ধাপে বহুতল ভবনগুলো রেক্টোফিটিং এবং তৃতীয় ধাপে ১০ রিখটার স্কেলেও সহনীয় ভবন তৈরি করা হবে।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) আয়োজনে সংলাপে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সম্ভাব্য ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে ডা. এনামুর রহমান বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে আমরা খুব বেশি কাজ করতে পারিনি। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, ভূমিকম্প পরবর্তীতে উদ্ধার কাজ— এগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা-সেমিনার করেছি। ভূমিকম্প সহনীয় রাষ্ট্র গঠন করতে আমরা এত দিন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।

জাপান একটি ভূমিকম্প প্রবণ রাষ্ট্র ছিল জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো ভবন ধসের সংবাদ এখন আর পাওয়া যায় না। সেখানে প্রতিটি ভবন ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে ১০ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে ৭০তলার ভবন টিকে আছে। তাদের ভবনগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে ভূমিকম্পে নষ্ট হবে না।

জাপানের সাথে কয়েক দফা আলোচনার পর তারা তিন ধাপে ৫০ বছরের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সকল স্থাপনা ভূমিকম্প সহনীয় করতে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা দেবে জাপান। আমরা সে কাজটি শুরু করেছি। এ কাজটি শুরু করে দিতে পারলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ভূমিকম্প সহনীয় নিরাপদ রাষ্ট্র পাবে।

তিনি বলেন, প্রথম ধাপে পুরান ঢাকার মতো দেশের যে সমস্ত জায়গায় অবকাঠামো আছে সেগুলোকে ডিবোলিশ করা হবে এবং সেখানে নতুন ডিজাইন করে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করে উপকারভোগীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এটার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে জাপান।

দ্বিতীয় ধাপে বহুতল ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে, এগুলো ভূমিকম্প সহনীয় না হলে রেক্টোফিটিংয়ের মাধ্যমে এগুলো স্ট্রেনদেনিং করা হবে। যেটা জাপান করেছে।

আর তৃতীয় ধাপে জাপান সরকার ইঞ্জিনিয়ার এবং আর্কিটেকদের প্রশিক্ষণ দেবে যাতে ১০ রিখটার স্কেলকে ল্যান্ডমার্ক ধরে নতুন যে ভবন হবে সেগুলো ডিজাইন করা হবে।

তিন ধাপের এই কাজের জন্য ফোকাল পয়েন্ট নির্বাচিত করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে জাইকার সব সদস্য দেশে চলে গেছে। তারা ফেরত এলে প্রথমে সমীক্ষা এবং পরে কাজ শুরু হবে।

পুরান ঢাকার প্রত্নতাত্ত্বিক ভবনগুলো প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য আছে সেগুলো যদি রেক্টোফিটিং করে ভূমিকম্প সহনীয় করা যায় তাহলে ব্যবস্থা নেবে তারা। আর কোনোভাবে যদি রেক্টোফিটিং করা না যায় এবং জীবনের ঝুঁকি থাকে তাহলে তারা আমাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমীক্ষার পর তাদের সাথে আর্থিক ও কারিগরি বিষয়ে চুক্তি হবে এবং তারপর কাজ শুরু হবে।

ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যাপারে পৃথিবী ডেভলপ করেনি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চীন ২০ সেকেন্ড আগে পূর্বাভাস দিলেও এটা খুব বেশি কার্যকর নয়। এটা নিয়ে সারা বিশ্বে কাজ চলছে। ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগের উদ্ধারকাজের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে।

বজ্রপাত নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর ২০০-২৫০ জন মানুষ মারা যায়, যার অধিকাংশই হাওর অঞ্চলে। আমরা বজ্রপাতের পূর্বাভাস কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এটার কাজ চলছে এবং যন্ত্রপাতি আসলে ৪০ মিনিট আগে সংকেত দেওয়া হবে। সংকেত দেওয়ার পর তারা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে সেজন্য হাওরসহ বজ্রপাত প্রবণ এলাকাগুলোতে একতলা বিশিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করব। এছাড়াও লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানোর পরিকল্পনা করেছি।

মন্ত্রণালয় অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে একটি কাঠামোর মধ্যে আসতে স্থায়ী কার্যাদেশ সংশোধন করেছি। এটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে কোথাও কোনো দুর্যোগ এলে কোথায় কখন প্রথম সাড়া দেবে তা উল্লেখ আছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এটা জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে দুর্যোগ মনিটরিং করার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সেন্টার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তেজগাঁওয়ে তিন একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন। সেখানে চীনের সহায়তায় ভবন তৈরি করা হচ্ছে।

বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার বক্তব্য রাখেন।

বন্যায় ৩৬টি জেলায় ৫২ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ কম এসেছে। তাদের সংখ্যা ৮৮ হাজার। তাদের খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। এ বছর প্রতিটি দুর্যোগে শিশু এবং গবাদি পশুর জন্য আলাদা করে খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বন্যার সময় আশ্রয় দেওয়ার জন্য ৪২৩টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ প্রায় শেষ হয়েছে এবং ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণও শেষ হয়েছে। এছাড়াও ৫৫০টি মুজিব কেল্লা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব এবং সোলার সিস্টেমসহ সার্বিক সুবিধা আছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগকালে ঢাকা থেকে ত্রাণ সামগ্রী বহন করে নিয়ে যেতে ৬৪ জেলায় ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে এবং এ বছরের শেষের দিকে এগুলো হস্তান্তর করা হবে। এতে খুব সহজে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারব।

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, নতুন করে ৫০০টি উপজেলায় ত্রাণ গুদাম, এক হাজার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, এক হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র এবং এক হাজার মুজিব কেল্লার জন্য পিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি