আরিফুল ইসলাম: নানা অনিয়মে জর্জরিত ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ১২০ নং উত্তর বাঘমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নানা অনিয়ম কে নিয়ম মানিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণি কক্ষে ৭ জন ছাত্র-ছাত্রী বসে আছে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের মত করে দুষ্টামি করে সময় পার করছে। তাদের পাঠদানের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকারা লাইব্রেরীতে বসে খোস গল্প করে সময় কাটাচ্ছে। তারা খোস গল্পে মশগুল থাকলেও শিক্ষার্থী শুন্য অপর দুই শ্রেনী কক্ষ। আরেকটি শ্রেণি কক্ষে দুই শিক্ষার্থী বসে খেলা করছে। বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকের পদটি খালি থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা বেগম। তিনি সহ ৫ জন শিক্ষক বিদ্যালয়ে থাকার কথা থাকলেও ১ জন সহকারী শিক্ষক উপস্থিত ছিলো না।
শিক্ষিকাদের পাঠদান রেখে লাইব্রেরিতে বসে খোস গল্প করার বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী তিন শিক্ষিকা সাংবাদিকদের উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের সাথে অশোভনীয় আচরণ করতে থাকে। শিক্ষিকাদের কাছে বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত কম শিক্ষার্থী থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন ছাত্র-ছাত্রী কম উপস্থিতি হওয়ার কারন প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষক না আসায় সেই ক্লাসটি আজকে হয়নি এবং প্রথম শিফট ক্লাস ছুটি হয়েছে তো তাই । প্রথম শিফট ছুটির ১ ঘন্টা আগ থেকে সাংবাদিকরা বিদ্যালয়টির সামনে অবস্থান করে। প্রাক প্রাথমিক, ১ম শ্রেনীর ক্লাস ও ২য় শ্রেনীর ক্লাস ছুটি হলে বিদ্যালয়টি থেকে মাত্র ১৩ জন ছাত্রছাত্রী বের হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষিকা সুরাইয়া বেগম এর কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কত? হিসেব দিলেন খাতা কলমে ১০০ জন। কিন্তু উপস্থিতি কম কেন? উত্তরে জানি না বলেই শেষ করলেন।
প্রথম শিফটের সকল শ্রেনী কক্ষ মিলিয়ে ১৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও বিদ্যালয়টির জন্য রিমেল বরাদ্ধ ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এর আগে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। সেই টাকা কোন কোন ক্ষাতে কি কাজ করিয়েছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদা বেগম বলেন আমাদের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) শিরিন আক্তার এর সাথে আমাদের সমন্বয় হয়েছে। তিনি সকল কাগজপত্র দেখে স্বাক্ষর করে দিয়েছে। আপনাদেরকে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারব না এর কোন উত্তরও দিতে পারব না। আপনারা এটিইও কাছ থেকে জেনে নিন। একটি আধুনিক ভবন থাকা সত্ত্বেও কেন সরকারের নির্ধারিত ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়টিতে উপস্থিত হচ্ছেনা ও উপবৃত্তি পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা কোথায় জানতে চাইলে কোন উত্তর তাদের কাছ থেকে মেলেনি।
এই বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়েও রয়েছে আরেক অনিয়ম। জানা যায়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার পর বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে আছেন প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা বেগম। অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষিকা তার ক্ষমতা ব্যবহার করে স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বিভিন্ন ভাবে ভাগবাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেছে। বিদ্যালয়ের অনিয়ম এড়িয়ে যাবার বিষয়ে অনুরোধ করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন।
এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শিরিন সুলতানা বলেন, আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে আমার সাথে কোন ধরনের সমন্বয় হয়নি।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আবু তাহের এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই স্কুলটির বেশ কিছু অনিয়মের বিষয় আমি অবগত রয়েছি, তার পরে ও আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।