আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী ডা. সৌম্য স্বামীনাথান বলেছেন, সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সুরক্ষাই প্রথম এবং সবার আগে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের ওষুধপ্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর বুধবার তিনি এমন মন্তব্য করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
ভ্যাকসিন নেয়ার পর একজন স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল স্থগিত করা হয়েছে। মহামারিতে তছনছ বিশ্ব অর্থনীতি এবং জনজীবন বাঁচাতে করোনার একটি কার্যকরি ভ্যাকসিনের প্রত্যাশায় দিন গুনছে কোটি মানুষ।
ডা. স্বামীনাথান বলেছেন, আমরা ভ্যাকসিন তৈরির গতি নিয়ে কথা বলছি…কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, স্বাভাবিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমরা কোনও ধরনের আপোষ করছি।
তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় এখনও সব ধরনের নিয়ম-নীতি মানতে হবে। মানুষকে যে ওষুধ এবং ভ্যাকসিন দেয়া হবে, তার সুরক্ষার পরীক্ষা সবার আগে এবং প্রথমে করতে হবে। অক্সফোর্ডের পরীক্ষামূলক এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর একজন স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় ট্রায়াল স্থগিত করা হয়।
অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের এই ভ্যাকসিনকে বড় ধরনের প্রতিশ্রুতিশীল উদ্ভাবন হিসেবে মনে করা হয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, চলতি বছরের শেষ দিকে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত তথ্য-উপাত্ত পাবেন বলে আশা করছেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিকে ‘দ্বৈত প্রতিরক্ষা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিনটি নজিরবিহীন গতিতে তৈরি করেছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। নভেল করোনাভাইরাসের দুর্বল প্রজাতির একটি অংশ (যা মূলত সাধারণ সর্দিকাশির দুর্বল ভাইরাস বা অ্যাডেনোভাইরাস হিসেবে পরিচিত) ও জিন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। ভাইরাসের দুর্বল সংস্করণটি শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করে। অক্সফোর্ডের গবেষকরা ভাইরাসটির জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন।
বিশ্বে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা এগিয়ে আছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে জানিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বের উন্নত, অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সুষ্ঠুভাবে বিতরণের লক্ষ্যে কোভ্যাক্স নামের একটি বৈশ্বিক জোট গঠন করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বের ৯২ টি নিম্ন আয়ের দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন সহায়তা চেয়েছে। এছাড়া ধনাঢ্যশালী আরও ৭৯টি দেশ ভ্যাকসিনের এই জোটে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন বন্টনের এই উদ্যোগে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সাল শেষের আগেই ২০০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ পাওয়ার ব্যাপারে কোভ্যাক্স আশাবাদী বলে জানিয়েছেন স্বামীনাথান। যদিও এই ভ্যাকসিন সংগ্রহের এই জোটের এখনও পর্যাপ্ত তহবিলের জোগান হয়নি।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনার প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ অঞ্চলে প্রাণ কেড়েছে ৯ লাখের বেশি মানুষের। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৭৭ লাখের বেশি।