1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন

মধ্যপ্রাচ্যের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে দেশের স্বর্ণ চোরাচালান

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪
মুস্তাকিম নিবিড়ঃ স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট জড়িত। আছে লাগেজ পার্টির যোগসূত্রও। অনেক চালানের সঙ্গে বাহক ধরা পড়লেও সবকিছু বিদেশ থেকে পরিচালিত হওয়ায় ‘মামলার তদন্তকারীরা’ কুলকিনারা করতে পারছেন না। চোরাচালানের একটি চেইন রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়। সেখান থেকে যাত্রীদের কাছে নানা কৌশল ও চুক্তিতে স্বর্ণের চালান বিমানে তুলে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, বিমান ও বেবিচকের লোকজনের যোগসূত্রে দেশের এজেন্টদের হাতে পৌঁছে চালান। ফলে আটক হওয়া চালানের ক্লু ধরে তদন্তসংশ্লিষ্টরা এগুতে পারে না বেশি দূর। নেপথ্য নায়করা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে, প্রকাশ হয় না তাদের পরিচয়। দেশের সবকটি বিমানবন্দর ও সীমান্ত পথে কোনো না কোনোভাবে স্বর্ণ চোরাচালান চলছেই। বিমান, বেসরকারি এয়ারলাইন্স ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মীদের সরাসরি জড়িত থাকার ভূরি-ভূরি অভিযোগ থাকলেও প্রতিকার মিলছে না। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর ও সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণপাচার হচ্ছে হরদম। পাচার হওয়া স্বর্ণের অনেক চালান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ঢুকছে ভারতে। পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দর।  সাড়ে ৫ বছর আগের এক স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় কয়েকদিন আগেই পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জের আদালত। তারা স্বর্ণের চালান বহন করেছিলেন।সূত্র বলেছে, চোরাকারবারিরা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণের চালানগুলো আকাশপথে দেশে নিয়ে আসে। বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে কর্মরত কেবিন ক্রু এবং বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মেকানিক, কাস্টমস, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কতিপয় সদস্যের সহায়তায় চোরাকারবারিরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ রুটে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপির বিমানবন্দর থানায় বর্তমানে ৪৬টি স্বর্ণ চোরাচালান মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এর মধ্যে গত ৬ মাসে দায়ের হয়েছে ৩৭টি মামলা। এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তাধীন রয়েছে ৯টি মামলা। ঢাকা কাস্টমস হাউসের করা স্বর্ণ চোরাচালানের ১৪ মামলার তথ্য চেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব মামলা বর্তমানে সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগে তদন্তাধীন। এর বেশিরভাগই ২০২১ সালের মামলা। ঢাকা কাস্টমস হাউসের কাছে তথ্য চাওয়া এই মামলাগুলোর মধ্যে ২০১৫ ও ২০২০ সালের দুটি মামলা রয়েছে। ৯টি মামলা ২০২১ সালে করা। আর তিনটি মামলা ২০২২ সালের। এই মামলাগুলো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা। এই ধরনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। মূলত ১৯৭৪ সালে দেশের চোরাচালান বন্ধ করতে এই আইন চালু করা হয়েছিল।
সম্প্রতি সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত গডফাদারদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা করেছে। আর চারটি মামলা করেছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। এরমধ্যে বেনাপোল সীমান্তে চোরাচালানের ঘটনায় ভাই ভাই সিন্ডিকেটের ৪৬টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৫ কোটি টাকা, বেনাপোলে একটি বাড়ি, একটি মার্কেট, ৩ একর ১৬ শতাংশ জমি, (যার সর্বমোট মূল্য ১০ কোটি টাকা) ও ৫টি গাড়ি (মূল্য দুই কোটি টাকা) আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যের ৩০টি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশে স্বর্ণের চালান আসে। এর মধ্যে ৭টি বিদেশি সিন্ডিকেট। দেশের ২৩টি সিন্ডিকেটের মধ্যে ১১টি সরাসরি আর ১২টি মানি এক্সচেঞ্জের আড়ালে। ১১টি দেশি সিন্ডিকেটের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরেই রয়েছে সাতটি। বাকি চারটির মধ্যে তিনটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর ও একটি রয়েছে সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর ঘিরে। চোরাচালানের স্বর্ণ উদ্ধারে যেসব খবর পাওয়া যায় তার নেপথ্যে রয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যদের অন্তর্দ্ব›দ্ব। নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় স্বর্ণ চোরাচালানের তথ্য ফাঁস হয়। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫৭ মণ স্বর্ণেরবার ও স্বর্ণালংকার জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত দুই শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিমান ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মীও রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে স্বর্ণ চোরাচালান-সংক্রান্ত ৩১৮টি মামলা হয়েছে। বিমান ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের ২৬০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরপরও বিমান ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের অনেক স্টাফের বিরুদ্ধে চোরাচালানে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতি মাসে বিভিন্ন বিমানবন্দরে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ কেজি স্বর্ণ আটক হলেও বিশাল অংশ থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যা নিয়ন্ত্রণ করছে স্বর্ণ চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে এ সিন্ডিকেট কয়েকটি ভাগে কাজ করে। এর মধ্যে দেশে আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করে। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে।চোরাকারবারিরা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণের চালানগুলো আকাশপথে দেশে নিয়ে আসে। বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে কর্মরত কেবিন ক্রু এবং বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মেকানিক, কাস্টমস, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও ইমিগ্রেশন পুলিশের কতিপয় সদস্যের সহায়তায় চোরাকারবারিরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ রুটে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনছে। কিন্তু অধরা রয়ে যাচ্ছে স্বর্ণ চোরাচালালের মুল হোতারা, যার অনুসন্ধান করছে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি