শেখ আলী হোসেন রনি, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি: বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালকের (ডিজি) বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য দ্রুত অপসারণ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসী। এ সময় তারা মহাপরিচালককে ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যা দিয়ে স্লোগান দেয়।
রবিবার (১ ৯ মার্চ) ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ভবন এলাকায় এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন
বিনার প্রকল্প পরিচালক ড. মাহবুবুর রহমান তরফদার, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রেজা মোহাম্মদ ইমন, ড. আশিকুর রহমান, ড. হাসানুজ্জামান, শেরপুর বিনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ফরহাদ হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি শফি আহমেদ দিপু, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সোহাগ কবির, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি শরীফুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আব্দুর রশিদ প্রমুখ।
এক প্রশ্ন জবাবে বিক্ষোভকারীরা দেশের একমাত্র কৃষি গবেষনামূলক এই প্রতিষ্ঠানটিকে অবিলম্বে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করার দাবি জানান। এতে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) কৃষিবিদ ড. মাহাবুবুল আলম তরফদার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অধিকার বঞ্চিত একটি পক্ষ প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসরদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিনা দেশের একমাত্র কৃষি গবেষনামূলক প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট কর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে বর্তমানে গবেষনায় মন নেই বিজ্ঞানীদের। আমি মনে করি বিনাকে ধ্বংস করতে এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
অভিযোগ উঠেছে, বিগত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিনার পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হলে টানা ১৫ বছরে বঞ্চিত ৯ জন কর্মকর্তাকে জেষ্ঠ্যতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও ডিজি আবুল কালাম আজাদ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মানছেন না। উল্টো তিনি জেষ্ঠতা লঙ্গন করে ২৭ জন সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। এসব ঘটনায় বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
এগ্রিকালচার এসোসিয়েশনের নেতা কৃষিবিদ মো. আব্দুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, “ফ্যাসিস্টদের দৌরাত্ব বিনাতে এখনো কমেনি, বরং মুখোশ আড়াঁল করে বেড়েছে। আর এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন ডিজি। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে বিনার কয়েকটি প্রকল্পে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে সাবেক কৃষিমন্ত্রীর এলাকার প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হয়। বর্তমান ডিজি ওই ফ্যাসিস্টের দোসরদের চাকরিতে স্থায়ী করতে মাসিক ভিত্তিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া করছেন।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানের একাধিক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “বিগত ৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ডিজি। সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। রুটিন ওয়ার্কের বাইরে তিনি কোনো কাজ করেন না। এতে প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।”
সূত্র জানায়, বর্তমান ডিজি আবুল কালাম আজাদ দীর্ঘ সময় পরিচালক (প্রশাসন) পদে দায়িত্ব পালনের পর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কৃষিমন্ত্রীর আর্শিবাদে গত বছরের ১০ জুন ডিজি পদ লাভ করেন। ফলে বিগত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিয়মিত অফিস না করে নানা অজুহাতে অনুপস্থিত থাকছেন। এতে কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা কোনো ধরনের প্রয়োজন বা দাবি ও আপত্তি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। এ নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ডিজি ড. আবুল কালাম আজাদের কক্ষে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ সময় তাঁর একান্ত সচিব (পিএস) ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শাহ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “গত সপ্তাহে ৪টি মিটিং থাকার কারণে স্যার (ডিজি) ঢাকায় ছিলেন। পরিচালনা পর্ষদে কি সিদ্ধাস্ত হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে অফিসে বসে বিক্ষোভ মিছিলের আওয়াজ পেয়েছি। শুনেছি ফ্যাসিস্টের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।”