ইউক্রেনে আক্রমণের জের ধরে পশ্চিমা দেশগুলো একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়ার ওপর। অন্যদিকে রাশিয়াও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর মিত্ররাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও অন্যান্য পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। আবার সরঞ্জাম, গাড়ি, প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি আমদানি করে রাশিয়া, যা দেশটির অর্থনীতি সচল রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ফলে মস্কোর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা রুশ অর্থনীতির জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে রুশ কারখানাগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হতে পারে। পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও এতে রাশিয়ারই ক্ষতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি রুশ প্রতিষ্ঠান অনেকাংশেই আমদানিনির্ভর। বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে রুশ প্রতিষ্ঠানগুলোরই লোকসানে পড়বে। এরই মধ্যে আমদানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রুশ অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লাডা চলতি মাসে উৎপাদন স্থগিত করেছে।
এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনামূলক কম ক্ষতি হবে। ট্রেড ডাটা মনিটরের তথ্য বলছে, গাড়ি আমদানির জন্য রাশিয়া বছরে ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলার ব্যয় করে। এক্ষেত্রে জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান অটোমোবাইল শিল্প নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার মোটরগাড়ির ৬৩ শতাংশ সরবরাহ আসে ওই দেশগুলো থেকে। সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে অটোমোবাইল শিল্পখাতের প্রধান দেশগুলো মাত্র ৩ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হারাবে।
সার্বিকভাবে রাশিয়ায় সরবরাহকৃত পণ্য ও পরিষেবার অধিকাংশ আসে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ৪৬টিরও বেশি দেশ থেকে। এর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞাগুলোর ফলে রুশ অর্থনৈতিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। রুশ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো, প্রধান সংস্থা, ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে অভূতপূর্ব চাপের সম্মুখীন। তবে রাশিয়া এ অর্থনৈতিক আক্রমণের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হবে।
এদিকে অর্থনৈতিক চাপ আছড়ে পড়েছে রুশ ভোক্তাদের ওপরও। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে পণ্য সংকটের আতঙ্কে দেশটির সুপারমার্কেটগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় সুপারমার্কেটের শূন্য তাকের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। চিনি ও শস্য কিনতে দেশটির সুপারমার্কেটগুলোয় ভিড় উপচে পড়ছে।
এ বিষয়ে পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের জেফ স্কট বলেন, এরই মধ্যে রুশ অর্থনীতিতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবলের দরপতন হতে হতে তা সর্বনিম্নে এসে ঠেকেছে। সুদের হার বেড়েছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হারও।
বিশ্বের শীর্ষ ১১তম অর্থনীতির দেশ রাশিয়া। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্য হলে ২০২০ সালে রাশিয়ার মোট অর্থনীতি ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও নিউইয়র্কের পরে চতুর্থ অবস্থানে থাকত।
এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রাশিয়ার অবদান থাকলেও পেট্রোলিয়াম, নিকেল ও প্যালাডিয়াম বাদে অন্যান্য পণ্যের বিকল্প পথ রয়েছে। সুতরাং মস্কোর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা কোনো বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না বৈশ্বিক বাণিজ্যের।