আজ ১লা মে, শনিবার, ২০২১ ইং তারিখ সামাজিক দূরত্ব মেনে ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার ও গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডাশনের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে মিরপুর-১১নং বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মিরপুর বাংলা (বালক) উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সামনে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের সভাপতি নারী নেত্রী সুলতানা বেগম।
সভাপতির বক্তব্য সুলতানা বেগম বলেন, গত ২৪ এপ্রিল ছিল সাভারের রানা প্লাজা ১১৪০ এর অধিক শ্রমিক হত্যার ৮ম বার্ষিকী। তার কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পরিবেশ বিরোধী ভূমিদস্যু এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৭ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। এত শ্রমিকের হতাহতের ঘটনায় আমরা শোকাহত। ২০২০-২১ সাল বাংলাদেশের তথা বিশ্ব শ্রমজীবি-কর্মজীবিদের জন্য এক দুঃসহ বছর। মহামারি করোনার ছোবলে অসুস্থ্যতার ভয়, বেকার ও অর্থ সংকটে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় দেশের লাখ লাখ শ্রমিক পরিবার। একযোগে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রায় ২৫টি পাটকল, এশিয়ার বৃহত্তম পেপার মিল খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলসহ রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বড় বড় শিল্প কারখানা বন্ধ। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও শ্রমিক-কর্মচারীরা অনেক ক্ষেত্রে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত। ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানে আইনগত বাঁধা না থাকলেও ছলে, বলে কৌশলে শ্রমিক-কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দেয়া হচ্ছে না। শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন দমন করতে হামলা নির্যাতনের পাশাপাশি গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা, হয়রানি বা চাকুরীচ্যুত করা হচ্ছে।
শ্রমিক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস, যুগ্ম সম্পাদক খাদিজা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফরিদ উদ্দিন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রুজিনা আক্তার সুমি, গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডাশনের সহ-সভাপতি মিসেস সুইটি, সেলিনা হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক রাবেয়া ইসলাম, ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টারের প্রচার সম্পাদক মোঃ তাহেরুল ইসলাম, সদস্য কল্পনা আক্তার, ফারুক হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম(রাজা), বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুহুল আমিন হাওলাদার, গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কার্স লীগ ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের শিল্প, কারখানার মালিকরা মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা লুন্ঠনের প্রতিযোগিতায় তারা ট্রেড ইউনিয়নকে সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশের সিংহভাগ শ্রমিক যেমন নির্মাণ, চাতাল, পরিবহন, গার্মেন্টস ও প্রবাসীসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করছে। যারা দেশের রপ্তানী আয়কে উন্নীত করেছে, দেশকে খাদ্য স্বয়ং সম্পূর্ণ করেছেন, জিডিপি বাড়াচ্ছেন, বৈদেশিক মুদ্রার স্ফীত করছেন তাদের জীবন কিভাবে কাটছে? প্রায় ৪০ লাখ গার্মেন্টস, ৬০ লাখ নির্মান, ৫০ লাখ পরিবহন, রি-রোলিং, তাঁত, চা, মেকানিকস, গৃহকর্মী, হোটেল রেস্টুরেন্ট, দোকান কর্মচারী, প্রবাসী শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক এবং ২ কোটি ৬০ লাখ কৃষি শ্রমিকদের জীবনে গনতন্ত্র সমমর্যাদা কথাগুলোর প্রয়োগ কোথায়? শহর-উপশহরগুলোতে বাড়ি ভাড়া দফায় দফায় বৃদ্ধি করার ফলে শ্রমিক কর্মচারীদের আয়ের বড় অংশ বাড়ি ভাড়া বাবদ পরিশোধ করতে হয়। বিদুৎ, গ্যাস-জ্বালানী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক-কর্মচারীরা আরো বিপাকে।
বক্তাগন নিম্নোক্ত দাবীগুলো তুলে ধরেন
১. প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের খাদ্য, স্বাস্থ্য ও কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর।
২. সংবিধান ও আইএলও কনভেনশন অনুসারে শ্রম আইন সংশোধন কর।
৩. সকল শ্রমিকদের করোনা ভেকসিন প্রয়োগ কর।
৪. আইএলও কনভেশন-১৯০ অবিলম্বে অনুসমর্থন কর।
৫. ২০ শে রমজানের মধ্যে সকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা ও বেসিকের সমপরিমান ঈদ বোনাস পরিশোধ কর।
৬. বাঁশখালী, রানা প্লাজা ও তাজরিনসহ সকল শ্রমিক হত্যার বিচার কর।
৭. করোনাকালীন সময়ে কর্মরত শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা ও যাতায়াতের অতিরিক্ত ভাতা প্রদান কর।
৮. জাতীয় নূন্যতম মজুরী ঘোষণা কর।
৯. রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও চিনিকলসহ বন্ধকৃত সকল কারখানা চালু কর। শ্রমিক কর্মচারীদের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ কর।