সমাবেশ-মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে এখনো কোনো শঙ্কা নেই দাবি করে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর অতীত কর্মকাণ্ড অত্যন্ত জঘন্য। তারা সাধারণ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। পুলিশকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের কোনোভাবেই সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, যারা ঢাকা শহরে সভা-সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তাদের রাস্তায় নয়, রাস্তা বাদ দিয়ে অন্যত্র উন্মুক্ত স্থানে সমাবেশ করার কথা বলা হয়েছে। সেটা খোলা স্থান বা মাঠও হতে পারে। ঢাকা একটা মেগা সিটি। এখানে যদি লাখ লাখ লোকের সমাবেশ হয়, তাহলে দুই আড়াই কোটি নগরবাসীর সমস্যা হয়, যারা অসুস্থ তাদের হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যেতে সমস্যা হয়। ঢাকা নগরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য কোনো জায়গা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। অন্য কোথায় সমাবেশ তারা করবেন। সেটা তারাই নির্ধারণ করুক।
বৃহস্পতিবার (২৬) দুপুরে ডিএমপি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে একই রকম চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে অন্যত্র সমাবেশ করার কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। আমরা আশা করছি রাজনৈতিক দলগুলো নগরবাসীর ভোগান্তি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, পল্টনেই তারা সমাবেশ করবেন। যদি তারা তাদের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন তাহলে ডিএমপির অবস্থান কী হবে? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় মাঠ গরম করা বা কর্মীদের চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে অনেক ধরনের কথা বলেন। সেটা আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি না। আমরা বিবেচনা করছি আইনসঙ্গত কথা। ঢাকা মহানগরে সমাবেশ করতে হলে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনারের অনুমতি নিতেই হবে। এটা আইনগতভাবেই বাধ্যতামূলক। কেউ যদি সেটা না করে তবে সেটা আইনের বরখেলাপ হবে। সুতরাং আমরা আশা করবো, আইনের প্রতি বাধ্য থেকে সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবেন, পুলিশকে সহযোগিতা করবেন।
একই দিনে (২৮ অক্টোবর) শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তারা অনুমতি না চেয়ে শুধু সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশের কাছে। ডিএমপি বলছে জামায়াতকে কোনোভাবেই সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।
জামায়াতে ইসলামীর ডাকা শাপলা চত্বরের সমাবেশের অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার বলেন, জামায়াতের ব্যাপারে ডিএমপির অবস্থান লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার। জামায়াতকে ঢাকা শহরের কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দল। যে দলটির নিবন্ধন হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন বাতিল করেছে। সুতরাং জামায়াতকে কোনো ধরনের স্পেস দেওয়ার সুযোগ নাই।
জামায়াত সমাবেশ করা নিয়ে অনঢ় অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, তারা কোনো স্পেস পাবে না। তাদের ব্যাপারে সহযোগিতা নয়, শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি। এরপরও যদি তারা অনুমতি ব্যতিরেকে সমাবেশ করতে হয়, তাহলে আইন তার গতিতে চলবে। জামায়াতের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিপ্লব বলেন, এটা মিথ্যে কথা। কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ঘিরে ডিএমপি কাউকে গ্রেপ্তার করে না। আমাদের ক্রাইম ডিভিশনের প্রত্যেক থানার ওসি ও ডিসিকে বলা আছে, যারা ওয়ারেন্টের আসামি, সন্দেহজনক আসামি, মামলা বা তদন্তর্ভুক্ত আসামি, নাশকতা হতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য বলা হয়েছে। এর বাইরে অন্য সাধারণকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই।
‘মহাসমাবেশ ঘিরে এখন পর্যন্ত নাশকতার হুমকির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে থ্রেট যে আসবে না সেটা তো বলতে পারছি না। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিটগুলো কাজ করছে। প্রত্যেকটি ঘটনা সময় আমরা পর্যালোচনা করছি।’
রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে ডিএমপি অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সক্ষমভাবে ডিএমপিকে গড়ে তুলেছেন। সুতরাং আমাদের অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ বা মোতায়েন করার প্রয়োজন নেই। আমরা যেকোনো পরিস্থিতি বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।