মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি : মাদারীপুরে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে রড ও সিমেন্টের। এতে করে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবন তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নকাজের ব্যয়ও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে কতিপয় ডিলার রড সিমেন্ট ব্যবসায় সিন্ডিকেট তৈরী করায় সাধারন খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের যাতাকলে পড়ে ব্যবসায় মার খাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে রড সিমেন্ট এর দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে অতি মুনাফা লোভী কতিপয় ডিলার কোম্পানীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ব্যবসায় সিন্ডিকেট তৈরী করলে তা প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেই। যার প্রভাব সাধারন ক্রেতাদের উপর পড়ছে। এছাড়া ভোগান্তির শিকার খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মাদারীপুর বনিক সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পায়নি ভোক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীসহ মনিটারিং ব্যবস্থা জরুরী বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন।
ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই মাস আগে বিভিন্ন ব্রান্ডের সিক্সটি গ্রেডের রড প্রতি টন গড়ে ৬২ থেকে ৬৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতো। এখন সেই রড বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭০ থেকে ৭৪ হাজার টাকা টন। দুই মাসের ব্যবধানে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। অন্যদিকে বেড়েছে সিমেন্টের দামও। দুই মাস আগে যে সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৩৮৫ টাকা প্রতি বস্তা, এখন তার দাম ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা। সর্বশেষ গত ১৫/২০দিনে সিমেন্টের দাম বেড়েছে বস্তা প্রতি আরো ৫০ টাকা। বেড়েছে রডের দামও।
মাদারীপুরে এক ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে সিক্সটি গ্রেডের রড একেএস টন প্রতি ৭০ হাজার টাকা, বিকেএস ৭৩হাজার টাকা, বিএস আর এম ৭৪হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে এঙ্কর ৪৫০, সেভেন রিংস ৪৭০, বসুন্ধরা ৪৮০, আকিজ ৪৮০, মেঘনা ৪৪০, ত্রি সিমেন্ট ৪৪৫, প্রাইম ৪৪৫, এবং কিং ব্র্যান্ড ৪৬০/৪৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সিমেন্টের মুল্য বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা প্রায় শুন্য হয়ে পড়ায় তার ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।
চরমুগরিয়ার সাজ্জাত হোসেন জানান, গত সপ্তাহে নির্মাণকাজের জন্য রড-সিমেন্ট কিনতে গিয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি। সব কিছুর দাম বেড়েছে।
সদর উপজেলার কুকরাইল এলাকা মের্সাস আলম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারি মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা যে দামে রড ও সিমেন্ট কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয় করি। তার থেকে সামান্য লাভে সেগুলো বিক্রি করে থাকি। কোম্পানীর নিকট হতে সরাসরি ক্রয় করলে ব্যবসায় যৌক্তিকভাবে মুনাফা লাভ করা যায়। অথচ রড সিমেন্ট ব্যবসার কতিপয় ডিলার সিন্ডিকেট করার কারনে সঠিক মুনাফালাভ করতে পারছিনা। দোকান ভাড়া কর্মচারী বেতনসহ ব্যবসায় বেশ ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, সিএস আর এম রড টন প্রতি ৬৬ হাজার টাকা করে কিনেছি অথচ দাম বৃদ্ধির কারনে বর্তমানে ক্রেতাশুন্য হওয়ায় ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। সিন্ডিকেটের ফলে ব্যবসায়ীক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে মাদারীপুর বনিক সমিতির বরাবরে তিনি লিখিত অভিযোগ করেন যে, বি এস ্আর এম কোস্পানীর অনুমোদিত ডিলার ব্যতীত কোন রড আলাদা কিনতে হলে কোম্পনী তাদের আইনী ঝামেলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানী করে। তাছাড়া স্বল্প রেটে রড কিনে মাদারীপুর শহরে প্রবেশ করলে ট্রাক আনলড করতে না দিয়ে হয়রাণী করছে বিএসআর এম কোম্পানী যা সম্পুর্ন অন্যায়। দীর্ঘদিন যাবত এ অবস্থায় চলে আসলেও বনিক সমিতি হতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তরিতগতিতে রড সিমেন্টের দাম অস্বাভাবকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মাদারীপুর শহর ও গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় যারা বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেছেন, তারাও পড়েছেন বিপাকে।
প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার একজন বলেন, নির্মাণ সামগ্রির দাম বেড়ে গেলে সাইটের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি বস্তা ৩০-৫০ টাকা বেশি দিয়ে সিমেন্ট কিনতে হচ্ছে। রড টনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ার পরও আমরা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
আরও কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রড সিমেন্টের দাম এভাবে বাড়লে নির্মাণকাজ আগের রেটে অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রডের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিএসআরএম ফরিদপুর রিজিয়ন ইনচার্জ মাইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আন্তজার্তিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারনে কোম্পানী গতকাল (বুধবার) পর্যন্ত রড টন প্রতি ৬৯হাজার টাকায় বিক্রি ও স্পট ডেলিভারী পর্যন্ত ৭১হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। সময়ের ব্যবধানে রডের দাম বাড়তে পারে। কতিপয় ডিলারের সিন্ডিকেট করনের অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে এ প্রসঙ্গে বলেন নির্ধারিত ডিলার ব্যতীত অন্য কেউ রড কিনে ক্রয়স্থান ব্যতীত অন্যত্র বা অন্যস্থানে বিক্রি করতে পারবেনা এটা কোম্পানীর নিয়ম। এর বেশী কিছু বলতে পারবোনা।
সিমেন্টের দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে কিং ব্র্যান্ড সিমেন্ট ফরিদপুর রিজিওন অফিসের মার্কেটিং অফিসার মো. মুশফিকুর বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালের দাম বাড়ায় কিং ব্য্রান্ড সিমেন্ট সহ কয়েক ধরনের সিমেন্টের গত ১মাসের ব্যবধানে বস্তা প্রতি ৪০/৫০ টাকা দাম বেড়েছে। আবার অনেকেই বাড়ানোর পর্যায়ে আছে। তবে সিমেন্টের দাম বৃদ্ধিতে সাধারন ক্রেতাদের মধ্যে আর্থিক চাপ থাকলেও নির্মান কাজ সম্পন্ন করতেই বাধ্য হয়ে সিমেন্ট কিনতে হচ্ছে।