প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। গ্রীষ্মের এই ভয়াবহ দাবদাহে মানুষ কীভাবে জীবন পার করে? অন্য প্রাণীরাইবা কিভাবে বাঁচে?
মানুষঃগরমে মানুষের শরীর থেকে ঘাম ঝরে। মস্তিষ্ক তখন বলে, ‘একটু শীতল হতে হবে।’ একক্রাইন ঘাম গ্রন্থিগুলো তখন কাজ শুরু করে এবং শিগগিরই মুখ, বগলসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম জমতে থাকে। ত্বকের সেই ঘাম বাষ্পীভূত করতে শরীর তখন অতিরিক্ত তাপকে কাজে লাগায়। এভাবে শরীর ঠান্ডা হতে থাকে। তবে বেশি গরমে মানুষ গোসল করে, আইসক্রিম খেয়ে বা ফ্যান, ছাতা, এসি ইত্যাদি ব্যবহার করেও শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করে।
উটঃউট পিঠের কুঁজোয় চর্বি জমিয়ে রাখে এবং যখন খাদ্য ও পানির অভাব দেখা দেয়, তখন সেই চর্বি গলিয়েই শরীরের চাহিদা মেটায়। ওই চর্বি গরমের সময় শরীরের বাড়তি উত্তাপ বের করে দিতেও সহায়তা করে। পানি না পেলেও উট কয়েক মাস বেঁচে থাকতে পারে। পানি পেলে অবশ্য ১০০ লিটারেরও বেশি পানি পান করে তেষ্টা মিটিয়ে নেয়।
হাতিঃসব প্রাণীর গায়ে যে লোম বা পশম থাকে তা তাদের শরীরকে গরম রাখে। কিন্তু হাতির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। তাদের শরীরে খুব ছোট ছোট যে লোম বা পশম থাকে, সেগুলো শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা গবেষণা করে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
শূকরঃশূকরও গরমে গোসল করে। তবে তাদের শরীরে ঘাম হয় না বলে সাধারণত কাদায় গড়াগড়ি করে। কাদা বেশিক্ষণ গায়ে থাকে, শুকাতে সময় লাগে, ওই সময় পর্যন্ত ঠান্ডা থাকে শূকরের শরীর।
কুকুরঃকুকুরের ত্বকেও ঘাম ঝরানোর গ্রন্থি নেই। তীব্র গরমে তারা থাবা এবং নাকের মাধ্যমে শরীরের তাপ বের করে। তাছাড়া তীব্র গরমে কুকুরদের যে হাঁপাতে দেখা যায়, জিহ্বা বেরিয়ে থাকে, তখন কিন্তু শরীরের অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয়। জিহ্বা গরম হয়ে গেলে কুকুর মিনিটে ৪০০ বার পর্যন্ত শ্বাস নেয়। ফলে জিহ্বার আর্দ্রতা বাষ্পীভূত হয় এবং তার ফলে শরীর শীতল হয়।
ফেনেক শিয়ালঃযে কোনো শিয়াল বা কাছাকাছি গড়নের যে কোনো কুকুরের চেয়ে অনেক বড় কান থাকে ফেনেক শিয়ালের। সেই কান ব্যবহার করে তারা শরীর ঠান্ডা রাখে। ফেনেক শিয়ালের দেখা মেলে মরুভূমি অঞ্চলে। সেখানে প্রায়ই তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট)-এর চেয়েও ওপরে ওঠে। তখন ওই বড় কান দুটো রীতিমতো পাখার কাজ করে।
অনেক পোষা প্রাণী গরমের সময় শরীরের তাপমাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ কারণে খুব গরমে অনেক প্রাণী হিটস্ট্রোকে মারা যায়। গ্রীষ্মের দাবদাহের সময় গাড়িতে দরজা-জানলা বন্ধ করে রেখে যাওয়ার কারণে অনেক কুকুর মারাও যায়। তাই কখনো গাড়িতে আপনার পোষা কুকুর রেখে যাবেন না। গিনিপিগ বা খরগোশও গরমে দ্রুত কাহিল হয়ে পড়ে। তখন তাদের পর্যাপ্ত ছায়া এবং পানি দিতে হয়।