স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের দিন ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে মোদি বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আহত হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দফতর সম্পাদক খন্দকার আরিফ-উজ-জামান।
এ ঘটনায় সোমার রাতে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন আরিফ। মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ দলটির মোট ১৭ নেতাকে আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) মামুনুলসহ হেফাজত নেতাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান আরিফ। এসময় বায়তুল মোকাররমের ওইদিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।
আরিফ-উজ-জামান বলেন, ‘আমি পুলিশের কাছে দাবি জানাচ্ছি, মামুনুল হকসহ এই মামলার ১৭ আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করা হোক। তবেই মানুষের মনে শান্তি ফিরবে।’
২৬ মার্চের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরিফ-উজ-জামান বলেন, ‘আমি সাধারণত জুমার নামাজ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আদায় করার চেষ্টা করি। সেদিনও বায়তুল মোকাররমে নামাজ আদায় করতে যাই। নামাজ শেষে দেখি একদল লোক জুতা উঁচু করে ‘এরা ইসলামের শত্রু, ধর ধর’ বলে স্লোগান দিচ্ছে। এক পর্যায়ে তারা সাধারণ মুসল্লিদের ওপর চড়াও হয় এবং মসজিদ থেকে বের হয়ে উত্তর গেইটের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় তারা মসজিদের টাইলস ভেঙে উত্তর গেইটের দিকে বৃষ্টির মতো ইট নিক্ষেপ করতে থাকে।’
আরিফ বলেন, ‘তাদের নিক্ষেপ করা ইটপাটকেলে আমার পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে যায়। তখন কয়েকজন মুসল্লি আমাকে ধরে মসজিদের দক্ষিণ গেটে নিয়ে আসেন। এ সময় মুহূর্তেই তাদের মধ্যে কয়েকজন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এই বিস্ফোরণে অনেকে আহত হন। দক্ষিণ গেটে এসে দেখি, হামলাকারীরা দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তারা দক্ষিণ গেটেও বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’
হেফাজতের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে এগিয়ে আসেনি, আপনি করলেন। কারণ কী? উত্তরে আরিফ বলেন, ‘ঘটনার পর আমি কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্নভাবে বুঝতে পারি যে, মামুনুল হকসহ হেফাজত নেতাদের নির্দেশে বায়তুল মোকাররমে ওইদিন ঘটনাটি ঘটে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সারাদেশে একটি নেতিবাচক বার্তা দেওয়া। এছাড়া ওইদিন যারা অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল তাদের মুখ থেকেই শুনতে পেয়েছি, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ ছাড়া তারা কোনো কর্মসূচিতে মাঠে নামেন না। তাই আমি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
আরিফ বলেন, ‘আমি আশা করব ওইদিন বাইতুল মোকাররমসহ সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম যে তাণ্ডব চালিয়েছে, পুলিশ তাদের দ্রুত গ্রেফতার করবে।’
আরিফের দায়ের করা মামলায় অন্য আসামিরা হলেন- মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা লোকমান হাকিম, নাসির উদ্দিন মনির, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবি, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাসুদুল করিম, মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, মাওলানা মুশতাকুন্নবী, মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের এবং মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব।