ছোট্ট ঠোঁটের ছানাটি হঠাৎ মায়ের গরম ঠোঁটের উষ্ণতা অনুভব করে। ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কী যেন একটা প্রবেশ করছে তার মুখে! হঠাৎ অনুভব করে সেই মোটা ঠোঁটের সাহায্যেই এক টুকরো খাবার চলে এসেছে তার মুখে।তখনও চোখ ফোটেনি তার। দৃষ্টি হয়নি প্রখর।
বিশ্বস্ত চোখের জ্যোতি দিয়ে আপন মাকে চিনে নেওয়ার অবস্থাও তৈরি হয়নি তার। কিন্তু মায়ের ঠোঁটের মমতাটুকু চিরনির্ভরতা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিটি মুহূর্তে।
প্রকৃতির অসংকোচ এই চিরন্তন দায়ভারটুকুই মায়ের চিরন্তন ভালোবাসা। নিজের প্রাণপ্রিয় ছানাটির জন্য। যুগের পর যুগ এই শাশ্বত নিয়মেই প্রকৃতির পাখিরাজ্যে অগণনভাবে তার কিচিরমিচির ছড়িয়ে রেখেছে।
আলোকচিত্রে দেখা যাচ্ছে ‘এশীয়-শাবুলবুলি’ (Asian Paradise-flycatcher) তার নিজের ছানাকে মুখে তুলে খাবার খাওয়াচ্ছে। এই পাখিটি ‘সাহেব বুলবুলি’, ‘শাহবুলবুল’ বা ‘সুলতান বুলবুল’ প্রভৃতি নামেও পরিচিত। ছোট আকারের পতঙ্গভুক পাখি হওয়ায় খুব সহজেই পতঙ্গ ধরে এনে নিজের ছানাকে খাওয়াতে সক্ষম।
গবেষকরা বলেন, প্রকৃতির পাখি রাজ্যে মা পাখিদের প্রতি কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই। আমাদের মায়েদের মতোই মা-পাখিরাও তাদের সন্তানের প্রতি গভীর মমতা ও স্নেহের অধিকারী। নিজের ছানাগুলো বড় না হওয়া পর্যন্ত খাবার সংগ্রহ থেকে শুরু করে পারিপার্শ্বিক শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা সব তাকেই সামলাতে হয়। যদিও বাবা-পাখিটা তার সঙ্গে সঙ্গে থাকে। তবুও মায়ের বিকল্প আর কিছুই নেই।
‘মা’ শব্দটির মধ্যে রয়েছে স্নেহ, মমতা, যন্ত্রণা, ধৈর্য, ত্যাগ, সংগ্রাম, নিঃস্বার্থ, পরম আশ্রয়, নির্ভরতা প্রভৃতি শব্দাবলীর মানবিক সব গুণাবলী। এগুলো নিজের গর্ভধারিণী ‘মা’ ছাড়া আর কারো মধ্যেই পাওয়া যায় না। প্রকৃতির প্রাণীকূলও এর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।