1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

মির্জাপুরে দিন দিন বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪

আনোয়ার হোসেন মির্জাপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা আশংকা জনক হারে বেড়ে চলছে। ১৪ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে এই উপজেলা গঠিত। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে রয়েছে সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজী। কয়েকজন কাজীর সাথে কথা বলে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার কথা জানা গেছে। মির্জাপুর উপজেলা কাজী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ আবুল হাসেমের দেয়া তথ্য মতে, ২০২৩ সালে তার দপ্তরে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছিল ৫০টি। তারমধ্যে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাকের ঘটনা ৭টি এবং স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাকের ঘটনা ১৩টি এবং খোলা তালাক ৩০টি। ২০২৪ এ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ৯ মাসে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে মোট ৬২টি। তারমধ্যে স্বামী কর্তৃক তালাক ১৬টি, স্ত্রী কর্তৃক তালাক ২০টি এবং খোলা তালাক ২৬টি। যা গতবছরের তুলনায় এই ৯ মাসেই অনেক বেশি।
ঘটনা-১) বিয়ের দশ বছরের মাথায় দূই সন্তানের জননী পারভিন স্বামী কে তালাক দিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে প্রতিবেশি ওসমানকে। ৮ বছর পর সন্তান না হওয়া এবং চরিত্রের দোষ দিয়ে গত দুই মাস আগে পারভিন কে তালাক দেয় ওসমান। ঘটনা -২) সুমি এবং শামীম নবম শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় পরিবারের অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। এক বছর পর সুমি শামীম কে তালাক দেয়। ঘটনা -৩) পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় মুন্নি আক্তার এবং সোহেল রানার। বিয়ের পাঁচ বছর পর নি:সন্তান মুন্নি সোহেল রানাকে মাদকাসক্ত, বেকার এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে তালাক দেয়। ঘটনা-৪ ) প্রবাসী সুজন ছুটিতে এসে বিয়ে করে রুনাকে। দুই মাস সংসার করে ছুটি শেষে বিদেশ চলে যায়। পাঁচ বছর পর দেশে এসে স্ত্রী রুনার পরকীয়ার কথা জানতে পেরে তালাক দিয়ে আবার বিদেশ চলে যায়। এই ঘটনা গুলো ২০২৪ এ মির্জাপুর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ঘটনা। সামাজিক কারণে ছদ্ম নাম ব্যবহার এবং ঠিকানা গোপন রাখা হয়েছে। এজাতীয় বিবাহ বিচ্ছেদের আরো ঘটনা মির্জাপুর উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও প্রায় প্রত্যেকটি তালাকের ক্ষেত্রে কারণ হিসেবে স্বামী স্ত্রীর বনিবনা না হওয়া, শারীরিক নির্যাতন এবং যৌতুকের উল্লেখ আছে; কিন্তু মূল কারণ ভিন্ন। ভাওড়া ইউনিয়নের কাজী মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন,সামান্য কারণে তালাক দেওয়া এখন মামুলি ব্যাপার হয়ে গেছ। কোন পক্ষ আমার কাছে তালাকের ব্যাপারে আসলে আমি তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি। এতে করে দেখা যায়, অনেক সময় আমাকে বাদ দিয়ে তারা অন্য কাজী দিয়ে অথবা কোর্টে গিয়ে উকিল নোটিশের মাধ্যমে তালাক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। আবার আমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যারা টাকার লোভে কাজটি করে থাকেন। মানুষ সাধারণত রাগ বা জিদের বশবতি হয়ে তালাক দিয়ে থাকেন। সময় নিয়ে একটু ভালোভাবে বুঝালে অনেককেই ফেরানো যায়। আমি নিজেও অনেকগুলো সমাধান করে দিয়েছি।
আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে দুইভাবে তালাক দেয়া যায়। তাফউইজ তালাক এবং খোলা তালাক। আর এই তালাক দেওয়ার প্রক্রিয়া সর্বশেষ কাজীর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সিদ্দিকা বলেন, আমার নিকট বেশিরভাগ নারীই আসেন স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন এবং যৌতুকের অভিযোগ নিয়ে। বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়া স্বিকার করে তিনি বলেন, বাল্য বিবাহই হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ। পরিপক্ক বয়স না হওয়ার কারণে স্বামী স্ত্রী একে অপরের মতামত কে প্রাধান্য দেয় না। যার ফলে চুড়ান্ত বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। মির্জাপুরে বসবাসকারী সরকারি কুমুদিনী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ ডক্টর আবদুল করিম মিঞা’র মতে, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়া, পরকীয়ায় আসক্তি, শারীরিক অক্ষমতা, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, ধৈর্যের অভাব, যৌতুক, এবং ইসলামী মূল্যবোধের অভাবে আমাদের সমাজে তালাক দেওয়ার বিষয়টি ধীরে ধীরে সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে। এখনই এর বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। সামাজিকভাবে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে একটু চেষ্টা করলে অযৌক্তিক বিবাহ বিচ্ছেদ রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।
মির্জাপুর উপজেলায় ১২৩টি সামাজিক সংগঠন, ৯৯টি সমবায় প্রতিষ্ঠান এবং ১৩টি এম আর এ সনদ প্রাপ্ত এনজিও রয়েছে। সুশীল সমাজ মনে করেন, পুরো উপজেলার গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলো বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে কাজ করলে। সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি