দেশে সব ধরনের জিনিষের দাম বৃদ্ধির কারণ মুদ্রাস্ফীতি বলেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। এর প্রথম কারণ বাংলাদেশের টাকার তুলনায় ডলারের মূল্য বাড়ছে, সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনেক ঋণ নিচ্ছে, বাজার ভিত্তিক সুদের হার নিরাপদ নয়। এখানে জোর করে সুদ হার কমিয়ে রাখা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা এরকম আরো হাজারো কারণ রয়েছে যে কারণে মুদ্রাস্ফীতি কমছে না। মুদ্রানীতি মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করার জন্য উপযুক্ত নয়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেছেন, মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় আমরা কাজ করছি। বাজারে পণ্যের দামে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে এবং কৃত্রিমভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমরা ডাবের দাম কমালাম, ডিমের দাম কমিয়েছি, এরকম প্রতিটি পণ্যের জন্য আমরা কাজ করছি।
শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে তা সম্ভব হচ্ছে না কেনো এমন প্রশ্নের উত্তরে গোলাম রহমান বলেন, শ্রীলঙ্কা এক্ষেত্রে যে নীতি অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ তার বিপরীতে চলছে আর এই বিষয়ে যারা নীতি নির্ধারক রয়েছেন তারাই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। অতি মুনাফা করতে বাজারে কৃত্রিম ভারসাম্যহীনতার পরিবেশ তৈরি করা হয়।
এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান কাছে জানতে চাইলে সিন্ডিকেটের কাছে বাজার ব্যবস্থাপনায় আমরা ব্যর্থ হচ্ছি কি না তিনি বলেন, আমরা আমাদের লজিস্টিক থেকে যেটুকু কাজ করার সেটা করছি। তবে গোলাম রহমান বলেন, সিন্ডিকেট শব্দটা একটা জনপ্রিয় শব্দ। আসলে বাজারে যে সিন্ডিকেট আছে এটা অনেকে স্বীকার করেন না। সিন্ডিকেট তখনই হয় যখন শলাপরামর্শ করে দাম বাড়ানো হয় কিন্তু আমাদের দেশে যে শলাপরামর্শ করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বিষয়টা তা না।
গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই হচ্ছে ‘ওলিগো প্রজেক্ট’ এখানে যারা জমিনের এখতিয়ার রয়েছে তারাই দাম বাড়ায়। তাহলে কি বাজার মালিক সমিতি এমনটি করছে এবং এটা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই এটা বলাটা ঠিক হবে না তবে এর কোনো উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি না বলে আমি মনে করি।
গোলাম রহমানের কাছে নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য অতি সাধারণ আয়ের মানুষগুলোর জন্য জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে গেছে এবং এব্যাপারে কি করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানি এমন অবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে আছে এবং থাকাটাই স্বাভাবিক তবে এর জন্য দেশের মুদ্রাস্ফীতি কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে সাধারণ মানুষকেই। নিজেদের আয় রোজগার বাড়াতে হবে।
বাজারে সব ধরণের নিত্য পণ্য জিনিষের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি শাক-সবজির দামও আকাশছোঁয়া, বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম যখন কমা শুরু হয় তখন বাংলাদেশের বাজারে এর প্রভাব পরে না কেনো ? জবাবে এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে সেই সাথে আমাদের দেশের ভোজ্য তেলের দামও কমেছে। যেসব পণ্যের গায়ে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) দেয়া থাকবে সেসব পণ্যেও দাম তো বাড়ানো সম্ভব না। শাক সবজি তো আমরা দেশে ফলাচ্ছি এক্ষেত্রে এটা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
ভরা মৌসুমেও মানুষ ইলিশ কিনতে পারছে না এমন প্রসঙ্গে গোলাম রহমান বলেন, এখানে ক্রেতারাই মূলত দায়ী, ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লাভের লোভে দাম বাড়ায় আর ক্রেতারাও সেই অনেক দাম দিয়েই ইলিশ কেনে। এখানে ক্রেতারও যেমন একটা ভূমিকা আছে বিক্রেতারও তেমন একটা ভূমিকা আছে এবং উভয়েই এর জন্য দায়ী। একই বিষয়ে এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ইলিশ নিয়ে আমরা কাজ করছি, কেনো এটার দাম এতো বাড়ছে সে বিষয়ে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সফিকুজ্জামান বলেন, টিসিবি ১ কোটি পরিবারকে প্রতি মাসে খাবার দিচ্ছে। টিসিবি তো সব ধরণের পণ্য দিতে পারবে না। গুড়ো দুধ তো টিসিবি দিতে পারবে না, শাক সবজি টিসিবি দিতে পারবে না এখানে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বেসিক যেই পণ্যগুলো রয়েছে সেগুলো তো টিসিবি দিচ্ছে। এখন তো নতুন করে চালও দিচ্ছে। টিসিবি যে ১ কোটি পরিবারকে খাদ্য দিচ্ছে এটা কিন্তু একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ।