দ্রব্যমূল্য নিয়ে জনগণের কষ্ট লাঘবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে মানুষ কষ্টে আছে। স্বীকার করে বসে থাকলে তো হবে না। নানা কৌশল দিয়ে এটি মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্যই হবে মূল্যস্ফীতি যেন আর না বাড়ে সেটি নিশ্চিতে কাজ করা।’
আজ মঙ্গলবার (৬ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনগুলো তুলে ধরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
সভার বরাত দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন এই মুহূর্তে আমাদের দুটি বড় সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ ও মূল্যস্ফীতি। এই দুটি সমস্যার সমাধানে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি পণ্যের রিজার্ভ বাড়াতে হবে। এটি টিসিবির মাধ্যমে করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু ঢাকায় নয়, অন্যান্য শহরগুলোতেও করতে হবে।
মূল্যস্ফীতি কেন এত বেশি হবে এমন প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেছেন, আমরা এটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করব।
বিদ্যুৎ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন দুই সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা প্রার্থনা করব দুই সপ্তাহ বিদ্যুতের যেন সমাধান হয়ে যায়।
পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, জি টু জি ভিত্তিতে নেওয়া ঋণের ব্যবহার বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, এক্ষেত্রে তাদের গাফিলতি থাকলে ভিন্ন কথা। কিন্তু আমাদের দিক থেকে যেন কোনো সমস্যা না থাকে।
সেই সঙ্গে ডলার সংকট মোকাবেলায় মিতব্যয়ী ও সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্পে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে গাড়ি কিনতে বলেছেন। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা প্রকল্প প্রস্তাবের গভীরে গিয়ে নিখুঁতভাবে মূল্যায়ন করবেন। যদিও এটা করা হচ্ছে। সেটি আরও কঠোরভাবে করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ডলার সংকট সাময়িক। আমরা আশা করি আমাদের রিজার্ভ বাড়বে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী আগামী অর্থবছর ৬ শতাংশের মধ্যে হয়ত মূল্যস্ফীতি রাখা যাবে না। কিন্তু সরকারি উদ্যোগগুলো দ্রুত নিলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। যেমন আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, দাম না কমালে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগল। যখনই আমদানির চিঠি এলো তখনই দাম কমতে শুরু করল।
পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগেও বলেছেন আজ, আবারও বলেছেন মিতব্যয়ী হতে। তিনি অপচয় রোধ করতে বলেছেন, জমি খালি রাখা যাবে না এসব আবার বলেছেন। উৎপাদন বাড়াতে আবারও তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে সেসব বলেছেন। আমরা কমিশনের সবাইকে বলি, প্রকল্পের গভীরে যেতে, প্রাপ্ততার অধিক সুযোগ কেউ নিচ্ছে কি না সেটা দেখতে। উদ্দেশ্য মৃতব্যয়ী হওয়া।
একনেকের আজকের সভায় ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।