ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের সন্দেহ মিরপুরের আওয়ামী লীগের এক এমপিকে। পরিবহন ব্যবসায়ী এই আওয়ামী লীগ নেতার লোকজনই মেট্রোস্টেশনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে টিকতে না পেরে নিজেরাই ভাঙচুর করে পিছু হটে যায়।
সূত্রমতে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরবর্তী সহিংসতায় মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে প্রথম অগ্নিসংযোগ করা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চলন্ত বাসে। আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের মেট্রো স্টেশনে কোনো প্রকার ক্ষতি করার চেষ্টা করেনি। এছাড়াও মেট্রো রেলের পল্লবী, উত্তরা, আগারগাঁও, মতিঝিল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার মেট্রো স্টেশনে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শুধু মিরপুর-১০ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারটি স্টেশনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলো হলো মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া। এতে কারা লাভবান হবে এবং আসলে কি ঘটেছিল সে প্রশ্ন মাথায় রেখে তথ্য উদঘাটন করছে গোয়েন্দারা।
স্থানীয় এক ব্যাক্তি দাবি করেন, মিরপুর ১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাস মালিকদের লোকজন জড়িত ছিল। তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে গিয়ে তারা আগুন লাগিয়ে দেয়।
গোয়েন্দাসূত্রগুলো বলছে, এমন সব দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে যা শিক্ষার্থীদের কাছে থাকার কথা না। বরং এ ধরনের দাহ্য পদার্থ বাস মালিক বা এ ধরনের যারা ব্যবসা করেন তাদের কাছেই থাকে যা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
ওই গোয়েন্দা সূত্র মতে, মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর মিরপুর-মতিঝিল রুটে বাসের ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। কোনো কোনো বাস সারাদিন চালানোর পরও দিনের খরচ উঠে না। যাত্রী সংখ্যা একদমই কমে গেছে। স্বল্প সময়ে যাতায়তের জন্য মিরপুরে সব যাত্রীই মেট্রোরেলকে বেছে নিয়েছেন। এ অবস্থায় মেট্রোরেল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া বাসমালিকদের কোনো বিকল্প নেই। তাই সুযোগ বুঝেই তারা মেট্রোরেল বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা গেছে, মেট্রোরেলের এমন কোনো ক্ষতি হয়নি যে চালু করতে এক বছর সময় লাগবে। লাইন বা কোচের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারিগরি কিছু ক্ষতি হয়েছে। সরকার চাইলেই এটা দ্রুত চালু করতে পারে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে একবছর সময় লাগবে। মেট্রোরেল বন্ধ রেখে সরকার জনমত নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছে বলেও ওই গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়।
মেট্রোরেলের পাশাপাশি সেতু ভবনের আগুন নিয়ে গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় আছে সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সরকার সমর্থক ঠিকাদাররা। তাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বিক্ষোভাকারীরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা করলেও কেবল মাত্র নিচতলায় দ্রুত হামলা করে সরে পড়েছে। বিটিভি বা বিটিআরসি ভবনে নিচতলায় আগুন দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে। কেবল মাত্র সেতু ভবনে ১২ তলা পর্যন্ত আগুন দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রিতি বিভিন্ন সরকারি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নথি ফাঁস হতে শুরু করায় সেতু ভবনের দুর্নীতির আলামত নষ্ট করতেই আগুন দেওয়া হয়েছে বলে গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন।