বার্সেলোনার হয়ে ৩৮তম ফাইনালে উঠেছিলেন লিওনেল মেসি। শৈশবের এই ক্লাবের হয়ে ৩৫তম শিরোপা জয়ের সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। কিন্তু কাল রাতে সুপার কাপের ফাইনালে শিরোপা তো জেতা হলোই না, উল্টো হাত বাড়িয়ে (বাগিয়ে বলাই ভালো) তাঁকে লাল কার্ডটাই নিতে হলো!
নিতান্ত বাধ্য না হলে এই কার্ড কেউ স্বেচ্ছায় দেখে না। মেসি বাধ্য হয়ে দেখেননি। ঘটে গেছে মুহূর্তের মহিমায়। অতিরিক্ত সময়ে দল ৩-২ গোলে পিছিয়ে, মেসির কাছে হয়তো ওটাই ছিল আক্রমণের শেষ সুযোগ। অ্যাথলেটিক বিলবাও বক্সের সামনে থেকে তাই বাঁ প্রান্তে বাড়িয়েছিলেন বল। এরপর দৌড় দেন যেন বিলবাও বক্সের ভেতরে কিংবা বলের কাছাকাছি থাকতে পারেন। এমন সময় প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকার আসিয়ের ভিয়ালিব্রে তাঁকে বাধা দিতে সামনে এসে পড়ায় মেজাজটা আর ধরে রাখতে পারেননি বার্সা তারকা। ডান হাত দিয়ে চাটি মেরে বসেন! ভিয়ালিব্রে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন।
ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্যে বার্সা তারকাকে লাল কার্ড দেখান মাঠের রেফারি জেসাস গিল মানজানো। ভিয়ালিব্রের গায়ে হাত তোলার সময় মেসির পায়ে বল ছিল না। ‘অফ দ্য বল’ মুহূর্তে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই বিধিসম্মত ছিল না। বার্সা অধিনায়ককে কী শাস্তি দেওয়া যায়, তা ঠিক করতে এ সপ্তাহেই বসবে সুপার কোপায় রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের কমিটি। সর্বোচ্চ চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন মেসি, এমন খবরই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। বার্সার মূল দলে হয়ে এই প্রথম লাল কার্ড দেখলেন আর্জেন্টাইন তারকা।
ইএসপিএন জানিয়েছে, ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডকে যে বার্সা দুই ম্যাচে পাচ্ছে না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে শাস্তি দ্বিগুণও হতে পারে, তা নির্ভর করছে সুপার কোপার কমিটি তাঁর অপরাধকে কীভাবে দেখছে, তার ওপর। লা লিগা ও কোপা ডেল রে ম্যাচে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার তৃতীয় বিভাগের কোর্নেলার বিপক্ষে কোপা ডেল রেতে মাঠে নামবে বার্সা। এরপর লা লিগায় (২৪ জানুয়ারি) এলচের মুখোমুখি হবে তারা। শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো হলে কোপায় পরের রাউন্ডেও মেসিকে দেখা যাবে না, সে ক্ষেত্রে অবশ্য বার্সাকে আগে জিততে হবে কোর্নেলার বিপক্ষে। লা লিগায় ৩১ জানুয়ারিতে ক্যাম্প ন্যুতে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মুখোমুখি হবে বার্সা। পরের সপ্তাহে তারা খেলবে রিয়াল বেটিসের মাঠে।
সাবেক রেফারি ও স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএসের বিশ্লেষক ইতুরালদে গঞ্জালেস মনে করেন, সংগত কারণেই লাল কার্ড দেখেছেন বার্সা তারকা, ‘মেসিকে লাল কার্ড দেখাতেই হতো। কারণ, তার হাত উঠেছে। বের করে দিতেই হতো।’ মাঠের রেফারি মানজানোর ম্যাচ প্রতিবেদনেও ‘প্রতিপক্ষকে হাত দিয়ে আঘাত করা’র কথা বলা হয়েছে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস জানিয়েছে, কমিটি যদি মনে করে ভিয়াব্রেকে আক্রমণ করেছেন মেসি, তাহলে তাঁকে ৪ ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হতে পারে। শৃঙ্খলাবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৮-এর অধীনে এ শাস্তি দেওয়া হতে পারে। নিষিদ্ধ থাকাকালে বার্সার বেঞ্চ, ড্রেসিংরুম থেকে দূরে থাকতে হবে মেসিকে। এমনকি মাঠেও ঢুকতে পারবেন না।
বার্সার মূল দলের হয়ে ৭৫৩তম ম্যাচে এসে প্রথম লাল কার্ড দেখলেন মেসি। এর আগে বার্সা ‘বি’ দলের হয়ে একবার লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পেনা স্পোর্ত দে তাফাল্লা দলের বিপক্ষে। দল জিতলে তবু হয়তো লাল কার্ড দেখার জ্বালা মেটাতে পারতেন মেসি। কিন্তু কাল রাতে সুপার কোপার ফাইনালে বিলবাওয়ের কাছে ৩-২ গোলে হেরেছে বার্সা। কাতালান ক্লাবটির হয়ে জোড়া গোল করেন আঁতোয়ান গ্রিজমান। বিলবাওয়ের হয়ে গোল করেন অস্কার ডি মার্কোস, ভিয়াব্রে ও ইনাকি উইলিয়ামস।
ম্যাচের পর রেফারিংয়ের মান নিয়ে পরোক্ষভাবে অসন্তোষ উগরে দেন বার্সা কোচ রোনাল্ড কোমান, ‘এটা (রেফারিং) নিয়ে আমার কথা না বলাই ভালো। একই কথা বারবার সামনে চলে আসবে আর বারবার এক কথা বলতেও ভালো লাগে না। আমি এ নিয়ে কথা বলব না। তবে মেসির লাল কার্ড দেখার মর্ম আমি বুঝি। জানি না ওকে কতবার ফাউল করা হয়েছে। বারবার ফাউল করা হলে এমন প্রতিক্রিয়াই স্বাভাবিক।’