ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই কৃষিজমিতে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের শত শত একর ফসলি জমি। শুধু তাই নয় ইটভাটার সাথে রয়েছে খাল। ইটভাটা হলে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকায় ফাইভ স্টার নামে নতুন এই ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় জমির মালিকদের সাথে ভাটা মালিকগণ ১১ বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়েছেন জমি। চুক্তিতে প্রতি বছরের পৌষ মাসে একর প্রতি ৯৬ হাজার টাকা দেওয়া হবে জমির মালিকদের। হালুয়াঘাট উপজেলায় বর্তমানে ১৭টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৩টি ইটভাটার। বাকিগুলো চলছে অবৈধভাবে। নতুন করে আবারো ইটভাটা নির্মাণ করা হলে তা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলছে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
নির্মাণাধীন ইটভাটায় গিয়ে মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া না গেলেও দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্বার্শবর্তী ফুলপুর উপজেলার নাঈম, খালেক, ইকবাল, মনো ও হোসেন আলী নির্মাণ করছেন এই ইটভাটা। অনুমতি নিয়ে ভাটা তৈরি করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। আমার কাছে কোনো কাগজপত্রও নেই।
ইটভাটায় জমিদাতা মতিউর রহমান বলেন, ভাটায় মোট ১৪ একর জমিতে নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ভাটায় আমি এক একর জমি দিয়েছি। এখানে নির্মাণাধীন ইটভাটার জন্য মোজাম্মেল মাস্টার, হাদি, শওকত আলী, আজগর আলী, গনি, হেলিমসহ অনেকেই জমি দিয়েছেন। মালিকপক্ষ ১১ বছরের চুক্তিতে আমাদের জমি নিয়েছেন। প্রতিবছর পৌষ মাসে ৯৬ হাজার টাকা একর প্রতি আমাদের দেওয়া হবে। লিখিতভাবে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জমির ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। অন্য জমিদাতাগণের অনুরোধে তাই আমিও ইটভাটায় জমি দিয়েছি।
বিষয়টি নিয়ে নির্মাণাধীন ইটভাটার মালিক নাঈম বলেন, আমরা কাগজপত্র তৈরি করেছি। শিগগিরই পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদনের জন্য জমা দেওয়া হবে। ইটভাটা নির্মাণের আগে ছাড়পত্র কেন নেওয়া হলো না জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দেননি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই জমিগুলোতে বোরো ও রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়। জমিগুলো ২ ফসলি ও উর্বর। এখানে কিছু টাকার জন্য স্থানীয় জমির মালিকরা ইটভাটায় তাদের ফসলি জমি দিয়েছেন। এতে করে তারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি আমাদের আশেপাশের কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। সরকার কখনো ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয় না। ফসলি জমিতে ইটভাটা হলে ওই জমিতে আর কোনো দিন ফসল হবে না। মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। এটাকে টপ সয়েল বলে। এই টপ সয়েল একবার নষ্ট হলে সে জমিতে আর প্রাণ থাকে না। ইটভাটা নির্মাণ হলে ওই এলাকার আশেপাশের বিভিন্ন ফলজ গাছেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। যখন গাছগুলোতে ফুল আসতে থাকে তখন যদি ইটভাটার ধোয়া ও গরম বাতাস ফুলের ওপর পড়ে তাহলে ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, আশেপাশের ফসলি জমিতে ভালো ধান তো হবেই না উল্টো চিটা হয়ে ধান গাছগুলো মরে যাবে। আমাদের দাবি, কোনভাবেই যেন নতুন করে ফসলি জমিতে ইটভাটা তৈরি না হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আমার কাছে ইটভাটার কেউ আসেনি। যদি কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করা হয়, তাহলে ওই ভাটার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ফরিদ আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমরা হালুয়াঘাট উপজেলার অবৈধ ইটভাটাগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। হালুয়াঘাটে নতুন করে কোন ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যদি কেউ নির্মাণ করে থাকে তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। আর অবৈধ ইটভাটা নির্মাণের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে।