যশোরে দুই পৌরসভা নির্বাচনে সাংসদ শাহীন চাকলাদার ও নাসির উদ্দীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে মাঠে নেমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি নির্বাচন অফিসের নজরে আসেনি বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
বাঘারপাড়া পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ ও চৌগাছা পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর আজ বৃহস্পতিবার বলেন, আচরণবিধি অনুযায়ী সাংসদেরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে দুজন সাংসদের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়টি তাঁদের নজরে আসেনি। কেউ কোনো অভিযোগও দেননি। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি চৌগাছা ও বাঘারপাড়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বুধবার চৌগাছা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূর উদ্দীন আল মামুনের নির্বাচনী কর্মিসভায় যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাংসদ শাহীন চাকলাদার ও যশোর-২ (চৌগাছা ও ঝিকরগাছা) আসনের সাংসদ মো. নাসির উদ্দীন যোগ দেন। এটি পৌরসভা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা আছে, রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চৌগাছা পৌর শহরের ছারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।
আওয়ামী লীগের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী প্রচারে নামায় বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী আবদুল হালিম অভিযোগ করেন, ‘ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের অব্যাহতভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে ভোট কেটে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন।’ তবে নির্বাচন অফিসে তিনি কোনো অভিযোগ করেননি।
এ অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নূর উদ্দীন আল মামুন বলেন, বিএনপির প্রার্থী ঢালাও অভিযোগ করছেন। সুনির্দিষ্ট করে তাঁকে বলতে বলেন, কোথায় কীভাবে এমন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাঁর তো কোনো লোকজনই মাঠে নেই।
সাংসদ নাসির উদ্দীন মুঠোফোনে বলেন, ‘প্রার্থীর নির্বাচনী সভায় আমরা যোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো বক্তব্য দিইনি। আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। কিন্তু সভায় যোগ দেওয়া যাবে না, তা বলা হয়নি। স্থানীয় সাংসদ হিসেবে আমি নির্বাচন মনিটরিং করতে পারব। ভোটের দিনও আমি মাঠে থাকব।’
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি বাঘারপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. কামরুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী সভায় সাংসদ শাহীন চাকলাদার যোগ দেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির ৪৭ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী কামরুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বিএনপির প্রার্থী আবদুল হাই বলেন, ‘নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের ফাঁসানো হয়েছে। সাংসদ শাহীন চাকলাদার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মিসভায় অংশ নেন। এটা আচরণবিধি লঙ্ঘন। লিখিত অভিযোগ দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই অভিযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সাংসদ শাহীন চাকলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল ধরেননি।