জেমস আব্দুর রহিম রানা:
যশোরে জমে উঠেছে ঈদ বাজার। রোযা যতই বাড়ছে ঈদের দিন তত এগিয়ে আসছে। মার্কেট গুলোতে বাড়ছে ক্রেতার উপস্থিতি। সবশ্রেনীর মানুষ ছুটছেন তাদের পছন্দের পোশাক কেনার জন্য। এজন্য বিপণী বিতানগুলো থাকছে ক্রেতা বিক্রতায় ঠাসা। প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেও ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত যশোরের মানুষ। পবিত্র রমজান মাসের ২০দিন অতিবাহিত হতেই পছন্দের পোশাকটি বেছে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছে ছেলে বুড়ো সবাই। তারা দোকান থেকে দোকানে পছন্দের পোষাক কেনাকাটা করতে ঘুরছেন। দাম দরে মিললে নিজের জন্য কিংবা প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পোষাকটি কিনছেন।
যশোরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে পাঞ্জাবি, পাজামা, টুপি, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, বাচ্চাদের বাহারি পোষাক, দেশি বিদেশী থ্রী পিচ ও জুতা বিক্রি বেড়েছে। সকাল ৯ টার পর থেকে মার্কেট গুলোতে ক্রেতার উপছে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দুপুর গড়িয়ে এলে কমতে থাকে লোক সমাগম। ইফতারির পর শহরের রাস্তা গুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। মার্কেটগুলোয় ক্রেতার বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যায়। নিজের পছন্দের পোষাকটি ক্রয় করতে বাজেট সংকট কাটিয়ে কেউ কেউ পুনরায় দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে বেড়ান। আবার কেউ কেউ নিজ ও প্রিয়জনের পছন্দকে প্রার্ধণ্য দিয়ে প্রথম দেখাতে প্রিয় শোষাকটি ক্রয় করে নিয়ে যান। ঈদ বাজারে বাড়তি ক্রেতা সমাগত লক্ষ্য করা যাচ্ছে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান গুলোতে। এই সব দোকানে স্বল্প মূল্যে জামা, পাঞ্জাবি, পাজামা, টি শার্ট, টুপি বিক্রি হয়। নিন্ম ও মধ্যবিত্তদের পছন্দের শীর্ষে থাকে এই সব অস্থায়ী দোকানের পোষাক।
বিশেষ করে যশোরের সিটি প্লাজা, মুজিব সড়ক, জেস টাওয়ারসহ অভিযাত বস্ত্র বিপনী গুলোতে ভিড় একটি বেশিই দেখা গেছে। শেষের দিকে ঠেলাঠেলি করে জিনিসপত্র কেনা কষ্টকর তবে দাম বেশী, কথাগুলো বললেন যশোর কাপুড়িয়া পট্টিতে ঈদের মার্কেট করতে আসা যশোরের সাড়াপোলের বাসিন্দা সাথি খাতুন। তিনি স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে পছন্দসই কেনাকাটা করতে বাজারে এসেছেন।
যশোর সিটি প্লাজায় পোষাক ক্রয় করতে আসা এক ক্রেতা বলেন, বর্তমান সময়ের ঊর্ধ্বগতির বাজারে জীবন ধারণ করতে গিয়ে বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের চরমভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে গিয়ে অতি প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য কিনতেই পকেট ফাঁকা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ঈদে বিভিন্ন পেশাজীবী নিম্ন আয়ের খেটে-খাওয়া, ছিন্নমূল, গরিব, হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষ ও তাদের সন্তানরা কি তাহলে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদে অর্থ সঙ্কটে একটি নতুন পোশাক কেনার অভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা নতুন পোশাক পরে ঈদে আনন্দ করবো আর পাশের বাড়ির নিম্ন আয়ের ব্যক্তির সন্তান একটি নতুন পোশাকের অভাবে ঈদে আনন্দ করতে পারবে না এটা হতে পারে না। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে পরিবারের পাশাপাশি কিছু ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র শিশুদের পোষাক কিনেছি। যেন আমার সন্তানদের সাথে তারও আনন্দ উল্লাসে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
যশোর সিটি প্লাজার ২য় তলায় অবস্থিত লেডিস টাচ্ নামের পোষাকের দোকান মালিক এমডি রায়হান সিদ্দিক জানান, এবারের ঈদে কেনাকাটা মোটামুটি ভাল। তবে রমজানের ঈদ সাথে পহেলা বৈশাখ হলেও গরমের কারণে মানুষ ঠিকমতো দেখেশুনে জিনিস কিনতে পারছেনা। দাম বেশির বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো জিনিসের দাম একটু বেশি হবেই। কিন্তু এখানে এসে কোন ক্রেতা ঠকে যান না। একবার যদি বেশি দাম মনে হয় তবে তার আর আসার দরকার নেই।
যশোর সিটি প্লাজার ২য় তলায় অবস্থিত অধরা নামের পোষাকের দোকানি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ঈদের কেনা কাটা আসলে শুরু হয়েছে কি না বুঝতে পারছি না। যেমনটা আশা করেছিলাম কেনা বেচা তেমনটা হচ্ছে না। ক্রেতার উপস্থিতি বেশি হলেও পণ্য বিক্রি কম। ঈদের এখনও চার দিন বাকি আছে। আশা করছি শেষ মূহূর্তে কেনা বেচা জমে উঠবে। যদিও মূল বেচাকেনা এখন শেষের দিকেই।
মনিরামপুর উপজেলার এক ব্যবসায়ী স্ত্রীকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন যশোর কালেকট্বরেট মার্কেটে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, কেনাকাটা তো করতেই হবে। তাই আগে-ভাগেই করাই ভালো। সাধ আছে সাধ্য নেই, ঈদের ক্ষেত্রে তা যেন প্রযোজ্য নয়। যেভাবেই হোক পরিবার-পরিজনের জন্য নতুন জামা কাপড় ও জিনিসপত্র কেনার ব্যাপারে কার্পন্য করা ঠিক হবে না। তাই ছুটে এসেছি। একই ধরণের কথা বললেন কাপুড়িয়া পট্টির সাকিব বস্ত্রালয়ে কেনাকাটা করতে আসা চৌগাছার এক সমাজ সেবক।
তিনি আরো বলেন, যাকাতের কাপড় কেনা ও বিলি করতে সময় লাগবে, তাছাড়া পরিবারের পছন্দসই কাপড় জুতা স্যান্ডেল কিনতে তো সময় লাগবে, তাই সময় হাতে নিয়ে ঈদ মার্কেটে নেমেছি কিন্তু অনেক ভীড়ের কারনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যশোরের মুজিব সড়কের আড়ং, সুই-সুতা, কাপুড়িয়া পট্টির মনষা বস্ত্রালয়, মুজিব সড়কের রং ফ্যাশন, শাড়ী ঘর, জেস টাওয়ার, তাঁত কুটির, বিদিশা, লিবার্টি সু, লেডিস কর্ণারসহ বিভিন্ন অভিজাত বিপণীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হলেও অভিজাত বিপণীতে বেচাকেনা তুলনামূলকভাবে কম। বেশী বিক্রি হচ্ছে সাধারণ ঈদ মার্কেটে। যশোরে গরীবের মার্কেট হিসেবে পরিচিত কালেক্টরেট মার্কেটে ভিড় বেশী। এক ব্যবসায়ী আলমগীর বললেন, এবার শিশু ও কিশোরদের পাঞ্জাবী, জুতা, স্যান্ডেল ও টি শার্ট এবং থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে বেশী। বড়দের জিনিসপত্রও বিক্রি হচ্ছে কম।
আড়ং যশোর সেন্টারে কেনাকাটা করতে আসা মুন্নি জাহান বলেন, ‘বাচ্চা ও স্বামীর জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। এখন পর্যন্ত কিছুই কিনতে পারিনি ৪-৫ টি দোকান ঘুরে দেখেছি পছন্দ হচ্ছে না। এখন যাব বড় বাজারে গিয়ে দেখি পছন্দ হয় কিনা। ঈদ বলে কথা কেনাকাটা তো করতেই হবে।’
তুহিন আফরোজ নামে একজন ক্রেতা বলেন, নিজের পছন্দের পোষাকটি ক্রয় করতে পেরেছি। ঘুরে ঘুরে নিজের প্রিয় পোষাক কিনতে পেরে ভালো লাগছে। যশোরে অনেক সুন্দর পরিবেশের দোকান গড়ে উঠেছে। মোটামুটি ভালো মানের পোষাক পাওয়া যাচ্ছে। বিদেশি পোশাকের দাম একটু বেশি। তবে সব পোষাকের দাম বেশি না।
শহরের দড়াটানায় অস্থায়ী দোকানে পাজামা, চুপি কিনতে আসা আব্দুল হালিম জানান, ঈদের সময় ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান থেকে কম দামে প্রয়োজনীয় পোষাকটি কিনতে হয়। আয় সীমিত হলেও ঈদে কেনা কাটার জন্য কিছু টাকা আলাদা করে রাখতে হয়।
বড় বাজার এলাকায় মেয়ের জন্য পোষাক কিনতে আসা আমেনা খাতুন বলেন, মেয়ের জন্য পোষাক কিনলাম। বাজারের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে বাজার। তারপরও সন্তানের আবদার মেটাতে তার প্রিয় পোষাক কিনে দিলাম। একটা সময় এসে মা বাবার আয় চাহিদা থাকে না। অনেক সময় সন্তানের মুখে হাসি ফোঁটাতে নিজেদের কেনা কাটা হয়ে উঠে না।
ইমিটেশনের কানের দুল, চুড়ি ও পারফিউমের দোকানেও ভিড় আছে। ঈদমার্কেটে সাধারণত সকালে আর বিকাল থেকে রাতপর্যন্ত ভিড় হচ্ছে। দুপুরে রাস্তাঘাট দোকান পাটে লোকজনের উপস্থিতি একেবারেই কম। এর কারণ প্রচন্ড তাপদাহ।
এ দিকে যশোরের টেইলার্স গুলোতে খোঁজ নিয়ে জান গেছে অনেকে নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রচুর কাজের চাপে হিমসিম খাচ্ছেন প্রায় সব গুলো টেইলার্সের দোকান গুলো।
এ ব্যাপারে যশোর এইচ এম এম রোডের মডার্ন টেইলার্সের মালিক রুহুল আমিন বলেন, আমরা রোজার ১০ দিন আগে থেকে কাজ শুরু করেছি পুরো দমে। তিনি বলেন এবার কাজের চাপ বেশি তাই ঈদের আগে সকল পোশাক ডেলিভারি দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। বর্তমানে নতুন করে কোন অর্ডার নেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
যশোরের মুজিব সড়কের সুইসুতা, কাপুড়িয়া পট্টির বিদিশা, মনষা বস্ত্রালয়, মুজিব সড়কের ধারা, রং ফ্যাশন, আড়ং, শাড়ী ঘর, তাঁত কুটির, বিদিশা, লিবার্টি স্যু, লেডিস কর্ণারসহ বিভিন্ন অভিজাত বিপণীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে রমজানের তৃতীয় দিন থেকেই। লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, অভিজাত বিপণীতে বেচাকেনা তুলনামূলকভাবে কম। ভারতীয় কাপড়ের পাঞ্জাবী, থ্রিপিস, শাড়ীর বেচাকেনা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আধিক্য কম। দেশী সুতী কাপড়ের চাহিদা বেশী। তবে বেশী বিক্রি হচ্ছে সাধারণ ঈদ মার্কেটে। যশোরে গরীবের মার্কেট হিসেবে পরিচিত কালেক্টরেট মার্কেটে ভিড় বেশী। এক ব্যবসায়ী বললেন, এবার শিশু ও কিশোরদের পাঞ্জাবী, জুতা, স্যান্ডেল ও টি শার্ট এবং থ্রি-পিস বিক্রি হচ্ছে বেশী। বড়দের জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে কম।
ব্যবসায়ীরা জানান, বরাবর ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের তারকারা যে সব পোশাক পরেন তার প্রতি এদেশীয় মেয়েদের দুর্বলতা থাকে। তারাও সে বিষয়টি মাথায় রেখে দোকানে পোশাক তুলেছেন। বিক্রিও বেশ সন্তোষজনক। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রিও তত বাড়ছে। ঈদ উপলক্ষে শহরের প্রতিটি বিপণী বিতানে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। এ জন্য প্রশাসনও রয়েছে সজাগ। ক্রেতা বিক্রেতারা যাতে নির্বিঘ্নে কেনাবেচা করতে পারেন সে জন্য প্রশাসন নিয়েছে ২ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার জানান, ঈদ সমাগত। কেনাকাটা করার জন্য শহরের সকল মার্কেটে মানুষের উপচেপড়া ভীড়। এই অবস্থায় মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরতে পারেন সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সকাল থেকেই মার্কেট, গুরুত্বপুর্ণ রাস্তার মোড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকছে। এর বাইরেও রয়েছে পুলিশের মোবাইল টিম। আশা করছি ক্রেতারা ভালভাবেই কেনাকাটা করতে পারবেন।