প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সরকারের সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না আগ্রহী সাধারণ ক্রেতা। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চেষ্টা করার পরেও তারা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না। বেসরকারি খাতের কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংকও জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে ইনপুট দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও কাজ হচ্ছে না। তারা বলছে, জাতীয় অধিদপ্তরের সিস্টেম আমাদের আবেদন গ্রহণ করছে না।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক যান্ত্রিক ত্রুটির বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে জানিয়েছেন খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান করা হবে।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (সঞ্চয় ও স্ট্যাম্প) সুরাইয়া পারভীন শেলী বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সার্ভারের সমস্যা হয়েছে। খুব দ্রুতই সমাধান হবে। ’
তবে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরেই এ সমস্যা হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র ক্রেতারা অপেক্ষা করছেন।
অর্থমন্ত্রণালয়ের আইবিএএস+++ সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। আইবিএএস+++ সার্ভারে সমস্যা হয়েছে। জাতীয় অধিদেপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আইবিএএস+++ অফিস স্থানান্তরের কারণে সমস্যা হয়েছে, যা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত। ’
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামসুন্নাহার বেগম বলেন, ‘কোনো ব্যাংক এখনো আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তাই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি আইবিএএস+++ সার্ভার নয়া পল্টনের গাজী ভবন থেকে সেগুনবাগিচায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে সার্ভার সমস্যার কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। ’
কর্মকর্তারা বলছেন, ‘কিছু বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে আগ্রহী নয়, কারণ সঞ্চয়পত্রের সুদহার বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি। তবে বিনিয়োগকারীরা সরকারের পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনতেই বেশি আগ্রহী। ’
গত সপ্তাহে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র কেনার আবেদন জমা দেন। তবে ব্যাংক থেকে জানানো হয় কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়ার পরেও সার্ভারে যুক্ত হওয়া যাচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। তবে পুরো অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
গত অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হলেও ব্যাংকগুলো দিচ্ছে মাত্র ৩-৪ শতাংশ সুদ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ২০ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, যা গেলো অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে তিনমাস পর পর মুনাফার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৫ হাজার ৫৯ কোটি টাকা এবং পাঁচ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকার।