যুক্তরাষ্ট্রের ঘুম নষ্ট করে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বোন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা টোকিও ও সিউল সফর শুরু করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা দক্ষিণ কোরিয়া সফর করবেন আগামীকাল বুধবার। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে মার্কিন নীতি নতুনভাবে পর্যালোচনা করা হবে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উনের বোন ও তাঁর উপদেষ্টা কিম ইয়ো জং। খবর এএফপির।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার জাপানে পৌঁছেছেন। চীনকে প্রতিরোধে সামরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ও পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করা এই সফরের লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে এই প্রথম সুনির্দিষ্ট কোনো বিবৃতি দিলেন কিম ইয়ো জং। যদিও বিবৃতিতে সুনির্দিষ্টভাবে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে।
পিয়ংইয়ংয়ের সরকারি পত্রিকা ‘রডং সিনমুন’-এর খবরে জানানো হয়, উনের বোন ওই বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তাঁরা আমাদের মাটিতে বারুদের গন্ধ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।’ কিম ইয়ো জং নতুন মার্কিন প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আগামী চার বছর ভালোভাবে ঘুমাতে চাইলে শুরুতেই এমন কাজ না করাই ভালো, যা ঘুম নষ্ট করে দিতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওয়াশিংটন উত্তর কোরিয়ায় পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ঘোষণা দিলেও সে প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।পরমাণু কর্মসূচির কারণে উত্তর কোরিয়ায় আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকে উত্তর কোরিয়া সীমান্ত বন্ধ রেখেছে।
গত জানুয়ারিতে বাইডেনের অভিষেকের আগে কিম জং-উন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেন। ওই মাসেই সামরিক কুচকাওয়াজে পিয়ংইয়ং সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপ করা যায় এমন নতুন ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী করে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যানয়তে কিম জং উন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর সিউল ও পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে।
কোরিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজির গবেষক সিন বিয়োম চুল এএফপিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে যথেষ্ট ছাড় দিচ্ছে না। সিউলে ব্লিঙ্কেন ও অস্টিনের সফর উপলক্ষে তাই কিম ইয়ো জং এমন বিবৃতি দিলেন। গবেষক সিন বিয়োম চুল আরও বলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের সফরকালে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ২৮ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েন আছে। প্রতিবেশী দেশ উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সুরক্ষিত রাখতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়া বরাবর অভিযোগ করে আসছে, হামলার প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এমন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
ওই বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে কিম ইয়ো জং বলেন, নিজেদের মাস্টারের কথামতো চললেও তিন বছর আগের পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার ফেরা সহজ হবে না। সিউল বেশি উসকানিমূলক আচরণ করলে উত্তর-দক্ষিণ সামরিক চুক্তি বাতিল করার হুমকিও দেন কিম ইয়ো জং।
অস্টিন ও ব্লিঙ্কেন গত সোমবার টোকিওতে পৌঁছেছেন। নতুন প্রশাসন পিয়ংইয়ংয়ে মার্কিন নীতি পর্যালোচনা করবে। তবে আলোচনার মূল ফোকাস হবে চীন। আগামীকাল বুধবার তাঁদের দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।