পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় ভিত্তি পায়। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এবং বৈশ্বিক উভয় ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারিত হতে থাকে।
সোমবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দূতাবাস ওয়াশিংটনে আয়োজিত ৫২তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডির ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মিজ ইসোবেল কোলম্যান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ ও নাহিম রাজ্জাক এমপি।
ড. মোমেন সোমবার দুপুরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠককে ফলপ্রসূ অভিহিত করে বলেন, “আগামী ৫০ বছরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে আমরা আশাব্যঞ্জক আলোচনা করেছি।”
তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থনদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতারা এবং খ্যাতিমান ব্যক্তিদের ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি জর্জ বুশ কর্তৃক বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রদানসংক্রান্ত রেজুলেশনের পক্ষে ১৬ বারের মধ্যে ১৫ বারই সমর্থন দেওয়ার বিষয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। ড. মোমেন এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের অংশীদারত্বের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬ কোটির অধিক ভ্যাকসিন দিয়ে সহযোগিতা প্রদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এবং রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় এককভাবে বৃহত্তম সহায়তা প্রদানের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন ও অগ্রগতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় পাশে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও জোরদারে শেখ হাসিনার সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
দুদেশের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি, বেসরকারি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা, যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ওয়াকার-উজ-জামান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিজের পরিচালক সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।