বিভিন্ন থ্রিলার-অ্যাকশন সিনেমায় কারাগার থেকে আসামি পালানোর নানা দৃশ্য দেখা যায়। তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। সেখানে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালানোর জন্য একটি ভবনের চারতলা থেকে লাফ দেন বন্দি ফরহাদ হোসেন রুবেল। পূর্ব পরিকল্পনায় জীবনের ঝুকি নিয়ে তিনি পালাতে সক্ষম হন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার।
পালানোর পর নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার বাল্লাকান্দি চরে যান আত্মগোপনে। ওই এলাকা থেকেই মঙ্গলবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে সিএমপি’র কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক ফরহাদ হোসেন রুবেলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা চলমান রয়েছে। যার মধ্যে একাধিক মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এসব মামলায় শাস্তি হওয়ার শঙ্কায় কারাগার থেকে পালানোর পরিকল্পনা করেন তিনি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল পুলিশকে জানান, একাধিক মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তার ধারণা এসব মামলায় নিশ্চিত সাজা হবে। তাই কারাগার থেকে পালানোর পরিকল্পনা করেন তিনি।
জানা যায়, রুবেল কয়েকদিন আগে থেকেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালানোর পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফোয়ারায় হাত মুখ ধুয়ে নির্মাণাধীন ভবনে উঠেন। ওই ভবনের প্রায় ৬০ ফুট উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে ৩০ ফুট দূরত্বের কারাগারের সীমানা প্রাচীর পাড়ি দেন। এরপর চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে করে প্রথমে ঢাকা এরপর বাসে করে নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার বাল্লাকান্দি চরে যান আত্মগোপনে। ওই এলাকা থেকেই মঙ্গলবার সকালে তাকে গ্রেফতার করে সিএমপি’র কোতোয়ালী থানা পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘কারাগার থেকে পালানোর পর নরসিংদী চর অঞ্চলে ফুফুর বাসায় আত্মগোপন করে রুবেল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।’
চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানা এলাকায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটে। এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান রুবেল। তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মীরেরকান্দি গ্রামের শুক্কুর আলী ভাণ্ডারীর ছেলে। গত শনিবার কারাগারে বন্দি রুবেলের খোঁজ মিলছিল না। এর আগেও তিনি পালানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। রুবেল কর্ণফুলী ওয়ার্ডের পঞ্চম তলায় পানিশমেন্ট ওয়ার্ডে থাকতেন।
রুবেল যে স্থান দিয়ে লাফ দিয়েছেন, সেই ভবনের পাশেই আরেকটি নির্মাণাধীন ভবন আছে। উচ্চতা পর্যালোচনা করে কারা কর্মকর্তাদের মনে হয়েছে, রুবেল ৪০ ফুটের বেশি উচ্চতা থেকে লাফ দিয়েছেন। এত উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ায় তার আহত হওয়ার কথা। এ কারণে রুবেল কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে পারেন বলে তারা ধারণা করেছিলেন।
রুবেল যে স্থান দিয়ে লাফ দিয়ে পালিয়েছেন, সেই স্থানের অদূরেই চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজনের কার্যালয়। সেই কার্যালয়ে নিয়মিত প্রহরী থাকেন। তাদের দৃষ্টিতেও রুবেলের লাফ দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েনি। এ ছাড়া কারাগারের চারপাশে উঁচু টাওয়ার আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে কারাগারের প্রহরীরা চারদিকে দৃষ্টি রাখেন। তাদেরও দৃষ্টি এড়িয়েছে রুবেলের লাফ দেওয়ার বিষয়টি। এই পরিস্থিতিতে কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার ফরহাদ হোসেন রুবেল নামে এক বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার দিন শনিবার সকালে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পুলিশ। রাতে একই ঘটনায় মামলা করা হয়। এ ঘটনার জেলার ও এক ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুই কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন।