পবিত্র রমজান মাস অগণিত নেকি অর্জনের মাস। তাই এ মাসে নেকি অর্জনের কোনো পন্থাই হাত ছাড়া করা উচিত নয়। সাধারণত বেশি সওয়াবের আশায় এ মাসে বিত্তবানরা জাকাত আদায় করে থাকে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ নয়, তারাও এই মাসে বেশি বেশি সদকা করার মাধ্যমে অগণিত সওয়াব লাভ করতে পারে।
যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারাও জাকাত আদায়ের পর অতিরিক্ত সদকা করতে পারে। তা ছাড়া এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বহু মানুষ কষ্টে আছে। অভাব-অনটন ও ঋণের জাঁতাকলে পড়ে বহু মানুষ পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের নীরব কান্না হয়তো আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। কিন্তু আমরা যদি এই কঠিন মুহূর্তে তাদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়াতে পারি, তবে মহান আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান বহু গুণে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। নিম্নে সদকার কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো;
রিজিকে বরকত আসে : সদকার মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত এনে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে মিটিয়ে দেন এবং সদকাকে বাড়িয়ে দেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৬)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে এক শ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬১)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করবে, (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ শুধু পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তাঁর ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদকা পাহাড় বরাবর হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস : ১৪১০)
সদকা আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা : পবিত্র কোরআনে সদকাকে আল্লাহর সঙ্গে সংঘটিত লাভজনক ব্যবসার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরো বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী। ’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯-৩০)
ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় : যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান করে, তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৪২)
পাপ মোচন হয় : দান-সদকার মাধ্যমে পাপের বোঝা হালকা হয়। তাই পবিত্র রমজানে বেশি বেশি দান-সদকা করা উচিত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে করো এবং তা অভাবগ্রস্তদের দান করো, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুত যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭১)
সদকা মানুষকে পরিশুদ্ধ করে : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদের পাক-পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৩)
এখানে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলছেন সদকার মাধ্যমে তাঁর উম্মতদের পরিশুদ্ধ করে নিতে। তাফসিরবিদরা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, সদকা আখলাক-চরিত্র পরিশুদ্ধ করার একটি অন্যতম মাধ্যম। (ইবনে কাসির)
আরশের ছায়াতলে আশ্রয় : যারা গোপনে দান করবেন মহান আল্লাহ কঠিন কিয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, ২. সে যুবক, যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে, ৩. সে ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে, ৪. সে দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর জন্য, একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য, ৫. সে ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’, ৬. সে ব্যক্তি, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না, ৭. সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)
জাহান্নাম থেকে মুক্তি : মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করলে, জাহান্নাম থেকে মুক্তির আশা করা যায়। কেননা নবীজি (সা.) জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি বেশি সদকা করার তাগিদ দিয়েছেন। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদুল আজহা অথবা ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, হে মহিলাসমাজ, তোমরা সদকা করতে থাকো। কারণ আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই বেশি। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, তোমরা বেশি পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাকো আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। (বুখারি, হাদিস : ৩০৪)